সম্প্রতি “কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি! এমন করুন পরিস্থিতি দেখতে হবে কখনো ভাবিনি” শীর্ষক শিরোনামে চলমান সিলেটের বন্যা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে একটি শিশুর পানিতে ডুবে যাওয়ার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের বন্যার ঘটনায় কোনো শিশুর পানিতে ডুবে যাওয়ার নয় বরং ছবিটি ২০১৪ সাল থেকে ভিন্ন ভিন্ন দেশে শিশুর পানিতে ডুবে যাওয়ার প্রতীকী ছবি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, ‘oxu.az’ নামের আজারবাইজান ভিত্তিক একটি নিউজ পোর্টালে ২০১৪ সালের ১২ জুন “Horror in Azerbaijan: The baby died in front of his mother(অনুবাদীত)” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে আজারবাইজানের মাসল্লী অঞ্চলের আব্বাসবেইলি গ্রামে ৩ বছরের একটি শিশুর নদীতে পড়ার কারণে মৃত্যুর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি, ‘big.az’ নামের আজারবাইজান ভিত্তিক আরো একটি নিউজ পোর্টালে একই দিনে উল্লিখিত শিশুর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও আলোচিত ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে, ‘qafqazinfo.az’ নামের আরেকটি আজাইবাইজান ভিত্তিক নিউজ পোর্টালে উল্লিখিত শিশুর মৃত্যুর একই ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভিন্ন একটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
এছাড়া, একই ছবি ২০১৪ সালের পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন দেশের ওয়েবসাইটে শিশুর পানিতে ডুবে যাওয়ার দৃশ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
তাছাড়া, যমুনা টিভি, Banglanews24, দৈনিক জনকন্ঠ, দৈনিক ইনকিলাব সহ বেশ কিছু দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু নিয়ে প্রকাশিত সংবাদেও আলোচিত ছবিটি ব্যবহার হতে দেখা গিয়েছে।
মূলত, পানিতে শিশু ডুবে যাওয়ার একটি পুরোনো ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের বন্যায় শিশু ডুবে যাওয়ার ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ মৃত গবাদিপশুর ছবিটি বাংলাদেশের চলমান বন্যার ঘটনার নয়
তবে, ছবিটির প্রকৃত ঘটনা এবং প্রেক্ষাপট সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য ইন্টারনেটে খুঁজে না পাওয়া গেলেও এই বিষয়টি নিশ্চিত যে ছবিটি বর্তমানে সিলেটে চলমান বন্যাতে কোনো শিশু ডুবে যাওয়ার দৃশ্য নয়।
প্রসঙ্গত, ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বর্ষণের কারণে বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) রাত থেকে ১২ ঘন্টাতেই সুনামগঞ্জে চার ফুট পানি বেড়ে যায়। ফলে বন্যার ভয়াবহতায় দিশেহারা হয়ে পড়ে সুনামগঞ্জের মানুষ। সুনামগঞ্জ ছাড়াও এই বন্যায় সিলেট বিভাগের প্রায় সব এলাকাই পানিতে ডুবে যায়। আগামী দুই দিনে এই পানি আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। সর্বশেষ পাওয়া তথ্যমতে আজ সিলেটে ভারী বৃষ্টি থেমেছে এবং ৪দিন পর সূর্যের দেখা মিলেছে। তবে নদ-নদী দিয়ে ভারতের উজান থেকে পাহাড়ি ঢল আসা অব্যাহত আছে। সিলেট নগরের কিছু উঁচু স্থানে পানি কমলেও সার্বিক অর্থে বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের সব কটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।
সুতরাং, ২০১৪ সাল থেকে বিভিন্ন দেশের ওয়েবসাইটে প্রতীকী ছবি হিসেবে ব্যবহৃত একটি ছবিকে সম্প্রতি সিলেটের বন্যার পানিতে শিশু ডুবে যাওয়ার দৃশ্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Oxu.az – Azərbaycanda dəhşət: Körpə anasının gözləri qarşısında can verdi
- Big.az – Azərbaycanda dəhşət: Körpə anasının gözləri qarşısında can verdi
- Qafqazinfo – Körpə anasının gözləri qarşısında can verdi – – Azərbaycanda
- BBC Bangla: বন্যা: সিলেট, সুনামগঞ্জে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে লাখ লাখ মানুষ, বিচ্ছিন্ন সুনামগঞ্জ
- Prothom Alo: সিলেটে সকালে সূর্যের উঁকি, বৃষ্টি থামলেও ঢল আছে