সম্প্রতি, “বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস মুক্তি পেলো” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখান (আর্কাইভ)।
প্রতিবেদনটি প্রকাশ অবধি ভিডিওটি এই পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৫০০ বার দেখা হয়েছে এবং ৪ হাজার ২০০ পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওতে প্রতিক্রিয়া দেখান হয়েছে। পাশাপাশি ভিডিওটি ২০৯ বার শেয়ার করা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস জামিনে মুক্তি পাননি বরং গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ১১টি মামলার মধ্যে ৯ টি মামলায় জামিন পেলেও ২ দিন মামলায় জামিন অপেক্ষমাণ থাকায় তিনি এখনই কারামুক্তি পাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে গত ৬ ফেব্রুয়ারি “মির্জা আব্বাস আরও তিন মামলায় জামিন পেলেন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে মির্জা আব্বাসের আইনজীবী মহিউদ্দীন চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে মোট ১১টি মামলা করা হয় এবং এর মধ্যে ৬ ফেব্রুয়ারি পল্টন, শাহজাহানপুর ও রমনা থানার আলাদা তিনটি মামলায় জামিন পান মির্জা আব্বাস। আর এর আগের দিন ৫ ফেব্রুয়ারি পল্টন ও রমনা থানার আলাদা ছয় মামলায় জামিন পান আব্বাস।
তিনি আরও জানান, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় করা মামলা ও ঢাকা রেলওয়ে থানায় (জিআরপি) দায়ের করা আলাদা দুটি মামলায় মির্জা আব্বাস এখনো জামিন পাননি।
জাতীয় দৈনিক দেশ রূপান্তর এর গত ১০ জানুয়ারি “আরও ৩ মামলায় জামিন পেলেন মির্জা আব্বাস” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, গত ২৮ অক্টোবর পরবর্তী সময়ে মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে হওয়া ১১ টি মামলার মধ্যে নয়টি মামলায় জামিন পেলেও আরও দুইটি মামলায় জামিন না পাওয়ায় তিনি এখনো কারাগারে আছেন।
ভিডিও যাচাই
ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে বেসরকারি ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম চ্যানেল ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ৯ জানুয়ারি “আমাদের জীবন থেকে ৩২ দিন এই সরকার কেড়ে নিয়েছে: মির্জা আব্বাস” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর একটি অংশই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে যুক্ত করা হয়েছে।
ভিডিও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, নয়া পল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলায় দলীয় নেতাকর্মীদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ ও দায়ের করা মামলায় ২০২৩ সালের ৯ জানুয়ারি মির্জা আব্বাস জামিনে মুক্তি পান। এটি সেসময় তার জামিন পরবর্তী গণমাধ্যমে সাক্ষাতের ভিডিও।
উল্লেখ্য, গত ৩১ অক্টোবর শাহজাহানপুর এলাকায় ‘নাশকতামূলক ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম’ চালানোর অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে প্রথমে গ্রেপ্তার এবং পরে কারাগারে পাঠানো হয়।
মূলত, গত ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশের দিন ‘নাশকতামূলক ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম’ চালানোর অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ১১টি মামলা হয় এবং ৩১ অক্টোবর শাহজাহানপুর এলাকা থেকে তাকে এবং পরে কারাগারে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে
শাহজাহানপুর থানার নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনের এক মামলায় তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড এবং রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠায় আদালত। গত ৫ ফেব্রুয়ারি পল্টন ও রমনা থানার আলাদা ছয় মামলায় এবং পরদিন ৬ ফেব্রুয়ারি পল্টন, শাহজাহানপুর ও রমনা থানার আলাদা তিনটি মামলায় মির্জা আব্বাস জামিন পান। এরই প্রেক্ষিতে তিনি কারামুক্তি পেয়েছেন শীর্ষক দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, মির্জা আব্বাস নয়টি মামলায় জামিন পেলেও আরও দুইটি মামলায় তার জামিন অপেক্ষমাণ থাকায় তিনি এখনই কারামুক্তি পাচ্ছেন না। এই দুই মামলায় কারামুক্তির আগ পর্যন্ত তাকে কারাগারেরই থাকতে হবে।
সুতরাং, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস জামিনে মুক্তি পেয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Prothom Alo – মির্জা আব্বাস আরও তিন মামলায় জামিন পেলেন
- Desh Rupantor – আরও ৩ মামলায় জামিন পেলেন মির্জা আব্বাস