নোয়াখালীতে মুসলিম ব্যক্তির দোকানে হামলার পুরোনো ঘটনাকে সাম্প্রতিক এবং সাম্প্রদায়িক ঘটনা বলে অপপ্রচার  

সম্প্রতি, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের ৮ নং চরএলাহী ইউনিয়নের গাংচিল আসা বাজারে হামলার ঘটনা দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। 

একই দাবির এক্সের কিছু পোস্টের ক্যাপশনে বাংলাদেশি হিন্দুদের বাঁচানো সংক্রান্ত হ্যাশট্যাগও ব্যবহার করা হয়েছে।  সাম্প্রতিক ঘটনার দাবিকৃত পোস্টগুলোতে বর্তমান সরকারের আমলের ঘটনা দাবি করে এই সরকারের সমালোচনাও করতে দেখা গেছে।

উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নোয়াখালীতে দোকানে হামলার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এই ঘটনার সাথে কোনো হিন্দু ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতাও নেই বরং, ভিডিওটি ২০২৩ সালের যা সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ‘Channel Noakhali’ নামক একটি পেজে ২০২৩ সালের ০২ ডিসেম্বর আপলোডকৃত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ফুটেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর ফুটেজের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটিতে ক্যাপশন বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়, ১ ডিসেম্বর চরএলাহী ইউনিয়নের গাংচিল বাজারে রাজ গার্মেন্টসে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক শাহরাজ উদ্দিনসহ (৩১) তার পরিবারের হাজী মুস্তাফিজুর রহমান (৮৩), মো. বেলায়েত হোসেন (৬৩), ওমর ফারুক (৩৮), শাহাব উদ্দিন (৬৩) ও ইমাম হোসেন খান (৫৬)। বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, রাত ৯টার দিকে গাংচিল বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. রাজীব খান ও তার শ্বশুর দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের সবার হাতে থাকা ধারালো দেশী অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ছয়জনকে জখম করে। এ ঘটনার দুই মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। জানা গেছে, গাংচিল বাজারের রাজ গার্মেন্টসের মালিক ছাত্রলীগ নেতা শাহরাজ উদ্দিনের কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. রাজীব খান। টাকা না দেওয়ায়

বিভিন্ন সময় তিনি হুমকিও দেন। এরই জেরে শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) রাতে অস্ত্রসহ রাজিব ও তার শ্বশুরের নেতৃত্বে সহযোগীদের নিয়ে রাজ গার্মেন্টসে হামলা ও ভাঙচুর চালান। রাজ গার্মেন্টসের মালিক শাহরাজ উদ্দিন গ্লোবাল টিভিকে বলেন, আমার কাছ থেকে ব্যবসা পরিচালনার জন্য এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজিব। আমি না দেওয়ায় বিভিন্ন সময় তারা হুমকি দিচ্ছিল। চাঁদা না দিলে ব্যবসা করতে দেবে না। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে সন্ত্রাসীদের বিচার চাই।

এ বিষয়ে জানতে বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. রাজীব খানের মোবাইল ফোনে বার বার কল দিয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব বলেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেলোয়ার হোসেন নামে একজনকে আটক করেছে। ভিডিওতে তাকে অস্ত্রহাতে হামলা করতে দেখা গেছে। তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। বাকিদের আটকে অভিযান চলছে।’

পরবর্তী অনুসন্ধানে যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ০২ ডিসেম্বর ‘নোয়াখালীতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলার ভিডিও ভাইরাল | Noakhali Attack | Viral Video | Jamuna TV’ শীর্ষক ক্যাপশনে আপলোডকৃত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে দেখানো ভিডিওটির ফুটেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির ফুটেজের সাথে সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ০১ ডিসেম্বর  রাত ৮টার দিকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চরএলাহী ইউনিয়নের গাংচিল বাজারের রাজ গার্মেন্টেসে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

এই বিষয়ে গণমাধ্যমটির ওয়েসবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘স্থানীয়রা জানান, গাংচিল বাজারের ডাব ব্যবসায়ী মুসলিমের দোকানের কর্মচারীকে ডিপ টিউবয়েল বসানোর কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন বাজার কমিটির সেক্রেটারি রাজিব খানের আত্মীয় তারেক। এ নিয়ে শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার দিকে গাংচিল বাজারে দুই পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে, রাজিব খানের মাথায় আঘাত করে মুসলিমের পরিবারের লোকজন। পরে রাজিবের স্বজনরা মুসলিমের ভাতিজা মো. শাহরাজ উদ্দিনের দোকানে রামদা নিয়ে পাল্টা হামলা চালায়। এ সময় তাদের পরিবারের পাঁচজন আহত হয়।’

এছাড়াও, যায়যায়দিনআরটিভির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদ থেকেও জানা যায় ঘটনাটি ২০২৩ সালের।

অর্থাৎ, আলোচিত এই ঘটনা ২০২৩ সালে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের।

সুতরাং, নোয়াখালীতে মুসলিম ব্যক্তির দোকানে হামলার  ২০২৩ সালের ঘটনাকে সাম্প্রতিক এবং হিন্দুদের ওপর হামলা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img