পারিবারিক কলহের জেরে শিশু মৃত্যুর ঘটনা রাজনৈতিক হত্যার দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি, দুটি শিশুর মরদেহের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ছবি ব্যবহার করে দাবি করা হচ্ছে যে, যশোরে এক ব্যক্তি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা তার দুই শিশুসন্তানকে হত্যা করেছেন।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, যশোরে এক ব্যক্তি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে তার দুই শিশু সন্তানকে হত্যার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে পারিবারিক কলহের জেরে এই দুই শিশুর মৃত্যু হয়। এই ঘটনার ছবি ব্যবহার করেই আলোচিত দাবিটি ছড়ানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘তথ্য ভান্ডার’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত ২৯ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি পোস্টে একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টের তথ্য অনুযায়ী, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলায় এক মা তার দুই সন্তানকে বিষ খাওয়ানোর পর নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

Comparison: Rumor Scanner. 

অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা মেইলের ওয়েবসাইটে গত ২৯ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দাবিকৃত একটি ছবি সংযুক্ত থাকতে দেখা যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে রত্না খাতুন (৩০) তাঁর দুই শিশুসন্তান মাহির (৫) ও আরিয়ান (৯ মাস)-কে বিষ খাওয়ান এবং নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় দুই শিশুর মৃত্যু হলেও সংকটাপন্ন অবস্থায় ওই নারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ ঘটনায় জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদন থেকে নিহত শিশুদের চাচা আরিফুল ইসলামের বরাতে জানা যায়, ঘটনার সময় রত্না বেগম সন্তানদের নিয়ে ঘরে ছিলেন। হঠাৎ কীটনাশকের গন্ধ পেয়ে স্বজনেরা দরজা খুলতে বলেন, কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে তিনজনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক দুই শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন। আরিফুল ইসলামের ভাষ্য, স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্যের জেরে রত্না সন্তানদের বিষ খাইয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে প্রতিবেশী ফজর আলী প্রথম আলোকে জানান, রত্না বেগম স্বামী মাহমুদুল হাসানের পরকীয়ার সন্দেহ করতেন, যার ফলে দাম্পত্য কলহ চলছিল। তাদের ধারণা, এ মনোমালিন্যের জেরেই রত্না সন্তানদের নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

সুতরাং, যশোরে এক ব্যক্তি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করায় তার দুই শিশুসন্তানকে সমন্বয়করা হত্যা করেছে দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img