গত ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারায় শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। গত ০৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ফোন কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে৷ দাবি করা হচ্ছে, ফোন কলটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এছাড়াও, দাবি করা হচ্ছে শেখ হাসিনা আগামী ১০ নভেম্বর একটি কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন এবং সেই কর্মসূচী উপলক্ষে নানা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। দিকনির্দেশনাগুলো হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের রঙ্গিন ছবি A4 সাইজের প্রিন্ট করে সাথে রাখবেন যারা সেদিন আসবেন সবাই। যাতে বুঝা যাবে ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ায় তাকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হচ্ছে। সবার কাছে ক্যামেরা আছে এমন মোবাইল সাথে রাখবেন। যাতে রাস্তায় কেউ হেনস্থা বা গ্রেফতার করতে আসলে ট্রাম্পের ছবি সহ ভিডিও করতে পারেন। যাতে প্রমাণ করা যায় ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাতে আসা লোকজনকে অবৈধ ইউনুস সরকার বাঁধা দিচ্ছে। সারাবিশ্বে এটি ছড়িয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সব কিছু কাভার করবে, ভিডিও চিত্র তুলে ধরবে। ১০ নভেম্বরে প্রোগ্রামে কোন মঞ্চ থাকবে না, হবে গণজমায়েত ও পদযাত্রা। রিক্সায় মাইক থাকবে, হ্যান্ড মাইক থাকবে। দলীয় কোন প্রকার ব্যানার ফ্যাষ্টুন বহন করা যাবে না। একবারে সাধারণ মানুষের মতো আসতে হবে। দলের শীর্ষ নেতা সহ কোন নেতারই ছবি ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষেধ। মহিলাদের ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে ভালো। একটু আগেভাগে এসে বায়তুল মোকাররম সহ আসে পাশের মসজিদ গুলোতে অবস্থান নেয়া। ৫ আগস্টের পর যেহেতু এটাই আমাদের প্রথম প্রোগ্রাম সেহেতু সকল ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আসুন লাখো জনতা একত্রিত হই। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেস বিজ্ঞপ্তি দাবিতে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিগত কয়েকদিন ধরে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে যেখানে আগামী ১০ নভেম্বরে বিশেষ এক কর্মসূচির আহ্বান ও এক্ষেত্রে ফাঁসকৃত কলরেকর্ডের অনুরূপ উপরোল্লিখিত দিকনির্দেশনাগুলো দিতে দেখা যাচ্ছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আলোচিত দাবিতে এরুপ কোনো প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি বরং, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ভিন্ন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে কথিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এতে তারিখ হিসেবে ৮ নভেম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। সাধারণত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিগুলো তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজেও প্রচার করে থাকে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করলে গত ৮ নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত কিংবা তার আগে এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি প্রচারের প্রমাণ মেলেনি। বরং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ভিন্ন প্রেস বিজ্ঞপ্তির ফন্ট ও লেখার ডিজাইনের সাথেও বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
Comparison : Rumor Scanner
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে আলোচিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি পাওয়া না গেলেও গত ০৬ নভেম্বর “যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড জে. ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা” শিরোনামে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, উক্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তির নিম্নাংশে বার্তা প্রেরক হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার স্বাক্ষর, স্বাক্ষরের অবস্থান এবং এমনকি স্বাক্ষরে থাকা কলমের কালির শুরু এবং শেষাংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিটির হুবহু মিল পাওয়া যায়৷ তাছাড়া, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিটিতে তারিখ হিসেবে উল্লিখিত ৮ নভেম্বরের ‘৮’ সংখ্যাটির সাথে তারিখ লাইনটির বাকী অংশের বৈসাদৃশ্য পাওয়া যায় যা সাধারণত ওভাররাইট করে থাকলে হয়ে থাকে। অর্থাৎ, এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভিন্ন একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট বা সম্পাদনা করে আলোচিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া, এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ থেকে গত ০৮ নভেম্বর (শুক্রবার) একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি নকল বা ভুয়া।
উল্লেখ্য যে, “১০ নভেম্বর বিশেষ কর্মসূচি” শীর্ষক শিরোনামে আলোচিত নির্দেশনা সম্বলিত কোনো প্রেস বিজ্ঞপ্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রচার করে না থাকলেও নিজেদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকার জিরো পয়েন্টে শহীদ নূর হোসেন চত্বরে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। পোস্টটিতে বলা হয়, “আগামী ১০ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, বিকাল ৩টায় শহিদ নূর হোসেন চত্বরে অগণতান্ত্রিক শক্তির অপসারণ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত মিছিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতাকর্মীসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী সাধারণ মানুষকে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। একই সাথে দেশব্যাপী সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো যাচ্ছে।”
সুতরাং, “আগামী ১০ নভেম্বর বিশেষ কর্মসূচি” শীর্ষক শিরোনামে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেস বিজ্ঞপ্তি দাবিতে প্রচারিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি এডিটেড বা সম্পাদিত।
তথ্যসূত্র
- Bangladesh Awami League – Facebook Post
- Bangladesh Awami League – Facebook Post
- Bangladesh Awami League – Facebook Post
- Rumor Scanner’s own analysis