শনিবার, মে 24, 2025

‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এআই-তৈরি ছবিতে সয়লাব সামাজিক মাধ্যম

গতকাল (১২ এপ্রিল) ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গাজার মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘মার্চ ফর গাজা’। কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন, ফলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকাগুলো জনসমুদ্রে পরিণত হয় (,)।

এরই প্রেক্ষিতে, সামাজিক মাধ্যমে ‘মার্চ ফর গাজা’র দৃশ্য দাবিতে তিনটি ছবি ছড়িয়ে পড়তে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

উক্ত দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

এক্সে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)।

ইউটিউবে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)।

থ্রেডসে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘মার্চ ফর গাজা’র দৃশ্য দাবি করে প্রচার করা আলোচিত এই তিনটি ছবি বাস্তব নয় বরং ছবিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আলোচিত তিনটি ছবি কোনো বিশ্বস্ত উৎস থেকে প্রকাশিত হয়নি। ছবিগুলো কারা তুলেছে, সে সম্পর্কেও পোস্টগুলোতে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। অন্যদিকে, ‘মার্চ ফর গাজা’র মূল আয়োজনের প্রকৃত ছবি ফটোগ্রাফারদের নাম উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এসব ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশ পেয়েছে (,)।

ছবিগুলোর নির্ভরযোগ্য উৎস শনাক্ত না হওয়ায় আলোচিত ছবিগুলো ভালোভাবে পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। বিশ্লেষণে এসব ছবিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তৈরি হওয়ার একাধিক লক্ষণ চোখে পড়ে।

বিশাল আকৃতির পতাকা হাতে জনসমাগমের দৃশ্যের ছবি দুইটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের মুখাবয়ব, দেহভঙ্গি, উচ্চতা ও পোশাকে অস্বাভাবিক রকমের মিল রয়েছে। অনেকের মুখমণ্ডল ও হাত বিকৃত কিংবা অসম্পূর্ণভাবে গঠিত। সারিগুলো অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, যা বাস্তব জনসমাবেশের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। বিশাল ফিলিস্তিনের পতাকাটিতে পাঁচটি স্ট্রাইপ দেখা যায়, যেখানে প্রকৃত পতাকায় থাকে তিন রঙের স্ট্রাইপ ও একটি ত্রিভুজ। পতাকাটি অতিরিক্ত নিখুঁতভাবে টানানো, যেখানে কোনো ভাঁজ বা মোচড় নেই। জনতার হাতে থাকা ছোট ছোট পতাকাগুলো একই কোণে, সমান দূরত্বে এবং প্রায় অভিন্ন ভঙ্গিতে উড়তে দেখা যায়, যেন নির্দিষ্ট একটি প্যাটার্ন বারবার কপি করে বসানো হয়েছে। জনস্রোতের গভীর অংশেও পতাকার ঘনত্ব প্রায় একই রকম দেখা যাচ্ছে। ছবির পটভূমিতে থাকা ভবন ও গাছপালাও অস্বাভাবিকভাবে মসৃণ ও নিখুঁত, যা অনেকটা ডিজিটাল চিত্রকর্মের মতো মনে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের ছোট ছোট পতাকা হাতে জনসমাগমের অপর ছবিতেও প্রায় একই ধরনের বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে। এখানেও অংশগ্রহণকারীদের দেহভঙ্গি ও উচ্চতার মধ্যে অস্বাভাবিক মিল, সোজা সরলরেখায় দাঁড়িয়ে থাকা এবং পতাকাগুলোর অভিন্ন প্যাটার্নে উড়তে দেখা যাওয়ার মতো লক্ষণ চোখে পড়ে।

এসব লক্ষণ বিশ্লেষণের পর ছবিগুলো হাইভ মডারেশন ও সাইটইঞ্জিন নামের দুইটি এআই-ভিত্তিক কনটেন্ট যাচাইকারী প্ল্যাটফর্মে পরীক্ষা করে দেখা হয়। উভয় প্ল্যাটফর্মের মূল্যায়নেই ছবিগুলো তৈরিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের প্রবল সম্ভাবনা উঠে এসেছে।

সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি আলোচিত তিনটি ছবিকে ‘মার্চ ফর গাজা’র দৃশ্য দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s analysis.
  • Analysis by sightengine and hive moderation. 

আরও পড়ুন

spot_img