গত ৭ জানুয়ারি চীনের পার্বত্য তিব্বত অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়। যাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি ব্যাপক প্রাণহানির তথ্য জানা যায়। এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, তিব্বতের ধ্বংসস্তূপের ছবি দাবিতে কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। যাতে ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া একটি শিশু, কয়েকজন বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং একজন নারীকে কাঁধে তুলে উদ্ধারের ছবিও দেখতে পাওয়া যায়।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভূমিকম্পে তিব্বতের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া শিশুর ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো বাস্তব নয়। এছাড়াও প্রচারিতকৃত ছবিগুলোর মধ্যে একটি ছবিতে থাকা নারীকে কাঁধে তুলে উদ্ধারের দৃশ্যটি ২০০৮ সালের এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ছবিটি ২০১০ সালে চীনে অনুভূত পৃথক পৃথক দুটি ভূমিকম্পের পরবর্তী সময়কালের।
ছবি যাচাই ১
ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া শিশুর ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রির্ভাস ইমেজ সার্চের মাধ্যমে চীনা গণমাধ্যম জিয়াংসু ইয়াংজি ইভিনিং এর ওয়েবসাইটে গত ৯ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি ইংরেজি ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে জানা যায়, আলোচিত শিশুর ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে।

এছাড়াও প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর এআই জিয়াওবা নামের একটি চীনা টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া শিশুটির একটি শর্ট ভিডিও পোস্ট করা হয় যেটি থেকে ছবিটি পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত পোস্টটির স্ক্রিনশটে দেখা যায়, পোস্টটিতে পোস্টকারী এআই লেভেল ব্যবহার করেছেন।
ছবি যাচাই ২
নারীকে কাঁধে তুলে উদ্ধারের ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রির্ভাস ইমেজ সার্চের মাধ্যমে নিউ ইয়র্ক টাইমসের ওয়েবসাইটে ২০০৮ সালের ১৬ মে In Departure, China Invites Outside Help শীর্ষক শিরোনমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত প্রতিবেদনে প্রকাশিত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টের নারীকে উদ্ধারের ছবির হুবহু মিল রয়েছে। ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয় এটি, ভয়াবহ ভূমিকম্পের তিন দিন পর বৃহস্পতিবার চীনের বেইচুয়ানে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকারীদের জীবিত একজনকে বের করে আনার দৃশ্য। এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সেসময় অনুভূত ওই ভূমিকম্পে প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অব্দি সিচুয়ান প্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ২১ হাজার ৫০০ মানুষের নিহত হওয়ার এবং ১৪ হাজার মানুষের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পরার তথ্য জানা যায়।
অর্থাৎ, উক্ত ছবির সাতে তিব্বতের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের কোনো সম্পর্ক নেই।
ছবি যাচাই ৩
সর্বশেষ বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ছবির বিষয়ে অনুসন্ধানে রির্ভাস ইমেজ সার্চের মাধ্যমে এনবিসি নিউজ-এর ওয়েবসাইটে ২০১০ সালের ১৪ এপ্রিল Low supplies hamper China quake rescues শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সাথে আলোচিত পোস্টের বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ছবির হুবহু মিল পাওয়া যায়। এছাড়াও ছবিটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি চীনের ছিংহাই প্রদেশের জিগু শহরের ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধারকাজ চলাকালীন সময়ের দৃশ্য।
অর্থাৎ, উক্ত ছবিটির প্রায় ১৪ বছর পূর্বের। যার সাথে তিব্বতের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের কোনো সূত্র নেই।
সুতরাং, ভূমিকম্পে তিব্বতের ধ্বংসস্তূপের ছবি দাবিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি ছবি ও পুরোনো ছবি প্রচার করা হয়েছে ; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Yangtse Website: In the Shigatse earthquake in Tibet, someone used an old picture generated by AI to pretend to be a “child crushed under the rubble”!
- Nytimes Website: In Departure, China Invites Outside Help – The New York Times
- Nbcnews Website: Low supplies hamper China quake rescues
- Rumor Scanner’s Analysis