নারী ফুুটবল নিয়ে প্রচারিত মন্তব্যটি শায়খ আহমাদুল্লাহর নয়

সম্প্রতি “ফুটবল খেলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেয়ে পর্দার সহিত স্বামীর খেদমত ও সন্তান লালন-পালন করা অধিক সম্মানের” শীর্ষক শিরোনামের একটি তথ্য শায়খ আহমাদুল্লাহর বক্তব্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানেএখানেএখানেএখানে এবং এখানে

পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানেএখানেএখানেএখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইসলামিক বক্তা শায়খ আহমাদুল্লাহ এরকম কোনো মন্তব্য করেননি বরং কোনোরূপ তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত মন্তব্যটি শায়খ আহমাদুল্লাহর মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে, গত ২১ সেপ্টেম্বর ইসলামিক বক্তা শায়খ আহমাদুল্লাহর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ২০২২ সাফ নারী ফুটবল টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের শিরোপা জেতার বিষয় সম্পর্কিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত পোস্টের কথাগুলো নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো-

মহিলা ফুটবল দলের শিরোপা জেতায় যারা অতি উৎফুল্ল, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় পর্দানশীন মেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করার ঘটনায় তাদের উৎফুল্ল হতে দেখা যায় নি কেন? তবে কি তাদের লক্ষ্য নারীর উন্নতি নাকি উন্নয়নের নামে নারীর উন্মুক্ত উপস্থাপন?

যারা নারী ফুটবলারদের দিয়ে এদেশে ‘ধর্মবিদ্বেষ’ কায়েম করতে চাইছেন, তাদের ভাবখানা এমন যেন মহিলা ফুটবল দল নেপালের বিরুদ্ধে খেলতে নামে নি, বরং ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিল! এ ইস্যুতে গতকাল থেকে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে আলেম সমাজ ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অবমাননা করে যেসব জঘন্য কার্টুন ছড়ানো হচ্ছে তা সমাজকে বিশৃঙ্খল করার অপপ্রয়াস।

বাস্তবতা হলো, এদেশের মানুষ ধর্মপরায়ণ। খেলোয়াড়রাও এর বাহিরে নন। আপনারা যাদের ‘ইউজ’ করে ইসলামবিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন, তাদের একজন আল্লাহর উপর ভরসার কথা লিখে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। আরেকজন মাকে নামাজ-রোজা করতে বলেছেন। কখনো আবার পুরো দল সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। এ থেকে পরিষ্কার যে, তারা মুসলমানের সন্তান। তারা আমাদেরই বোন। হয়তো ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা তাদের নাই। যারা পাহাড়ী আছেন, তারাও আমাদের অংশ।

তাছাড়া এসব মেয়েরা নিতান্ত গরীব ঘরের সন্তান। যদি তারা একটু সচ্ছল ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতেন তাহলে তাদের কয়জন ফুটবলকে পেশা হিসেবে বেছে নিতেন সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ বিষয়। সুতরাং ‘নারীবাদ’-এর মতো বড়লোকি তত্ত্ব তাদের জীবনে অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বহীন।

সুতরাং এদের দিয়ে ইসলাম বিদ্বেষ ও আলেমদের প্রতি ঘৃণার চাষাবাদ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এই দেশে সফল হবে না। বরং তাদের মধ্যে সামান্য দা’ওয়াতী কাজ করা গেলে এরা একেকজন হাজারো মানুষের হেদায়েতের কারণ হতে পারেন ইন শা আল্লাহ।

তবে এটা সত্য যে, যেটাকে খেলা বলা হচ্ছে সেটা মূলত: একটা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। সেই আগ্রাসনে যাদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে অনেক সময় তারা নিজেরাও জানেন না যে, কিছু পয়সার বিনিময়ে তাদের কোন্ কাজে ইউজ করা হচ্ছে। মহান আল্লাহ তাদের ও ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ লালনকারীদের হেদায়েত দান করুন।

উক্ত পোস্টের কোথাও “ফুটবল খেলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেয়ে পর্দার সহিত স্বামীর খেদমত ও সন্তান লালন-পালন করা অধিক সম্মানের” শীর্ষক মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে উক্ত বিষয়টির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে

শায়খ আহমাদুল্লাহর প্রতিষ্ঠিত আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা আলোচিত মন্তব্যটিকে শায়েখ আহমাদুল্লাহর কোনো মন্তব্য নয় বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন।

মূলত, গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে সাফ ফুটবল টুর্নামেন্টের শিরোপা অর্জন করে বাংলাদেশের মেয়েরা।

সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় নারী ফুটবলাররা দেশব্যাপী প্রশংসায় ভাসেন। তবে নারীদের ফুটবল খেলা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষের মাঝে

পরস্পর বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে “নারীদের ফুটবল না খেলে স্বামীর খেদমত ও সন্তান লালন-পালন করা অধিক সম্মানের” শীর্ষক মন্তব্যকে কোনোরূপ তথ্যসূত্র ছাড়াই শায়খ আহমাদুল্লাহর মন্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে সাফ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে প্রতিপক্ষ স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা অর্জন করে বাংলাদেশের মেয়েরা

সুতরাং, “ফুটবল খেলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেয়ে স্বামীর খেদমত ও সন্তান লালন-পালন অধিক সম্মানের” শীর্ষক মন্তব্যকে শায়খ আহমাদুল্লাহর মন্তব্য দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

  1. শায়খ আহমাদুল্লাহর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ: https://www.facebook.com/sheikhahmadullahofficial
  2. আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের বক্তব্য

আরও পড়ুন

spot_img