আফগান ক্রিকেটারদের মূল বেতনের ৩০ শতাংশ গ্রহণের দাবিটি বিভ্রান্তিকর

সম্প্রতি “ক্রিকেট বোর্ডের অর্থনৈতিক মন্দা বিবেচনা করা, মূল বেতনের ৩০ শতাংশ নিয়েই খুশী আফগান ক্রিকেটাররা। এমনকি বোর্ড কর্তকর্তা কর্মচারীরাও তাদের মূল বেতনের ৩০ শতাংশই গ্রহণ করছেন।” শীর্ষক শিরোনামের একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে,এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়আফগান ক্রিকেটারদের মূল বেতনের ৩০ শতাংশ গ্রহণের দাবিটি সঠিক নয় বরং বেতনের পুরো অংশই গ্রহণ করছেন আফগান ক্রিকেটাররা।

কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে গত ১৪ অক্টোবর জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’ এর ওয়েবসাইটে “বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, “আইসিসির কাছ থেকে টাকা নিতে না পারায় অর্থসংকটে ভুগছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি)। অর্থের অভাবে বোর্ডের কর্মীদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছে এসিবি। পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে সামনের দিনগুলোয় কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বেতন ৩০ শতাংশের বেশি দেওয়া সম্ভব হবে না। বোর্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সূত্রে এ খবর জানিয়েছে ইএসপিএন ক্রিকইনফো।”

প্রথম আলো জানিয়েছে, আইসিসির লভ্যাংশ ছাড়া আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের অন্য কোনো আয় নেই। আইসিসির কাছ থেকে টাকা না পাওয়ায় বোর্ডের পরিচালন–খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে এসিবি। অবশ্য আফগানিস্তান জাতীয় দল ও বয়সভিত্তিক দলগুলোর সব খেলোয়াড় এবং কোচরা এখন পর্যন্ত শতভাগ বেতন পেয়েছেন বলে জানিয়েছে ক্রিকইনফো। কিন্তু টানাটানি শুরু হয়েছে বোর্ডে কর্মরতদের বেতন দেওয়ায়।

পরবর্তীতে প্রথম আলো’র উল্লিখিত সূত্র ধরে জনপ্রিয় ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘Cricinfo’-তে গত ১২ অক্টোবর “Afghanistan cricket plunged into crisis as ICC funds-flow hits snags” শিরোনামে প্রকাশিত মূল প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়।  

প্রতিবেদনে বলা হয়, ” আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (ACB) দেশটির সমস্ত স্তরের খেলোয়াড়দের পাশাপাশি কোচিং স্টাফদের মুলতুবি অর্থ প্রদান সম্পন্ন করলেও বোর্ডে কর্মরত কর্মচারী এবং অন্যান্য কর্মীদের বেতনের মাত্র ৩০ শতাংশ দিতে সক্ষম হবে।”

মূলত, গত বছর তালেবান ক্ষমতায় আসার পর দেশটিকে প্রভাবশালী কোনো সরকারই স্বীকৃতি দেয়নি। তাই বর্হিবিশ্ব থেকে টাকা পাঠানোর পথ বন্ধ থাকায় আফগান ক্রিকেট আইসিসি থেকে এ বছর কোনো অর্থ পায়নি। একমাত্র আয়ের উৎস থেকে অর্থ না আসায় অর্থ সংকটে পড়েছে বোর্ড। সকল খেলোয়াড় এবং কোচদের এখন পর্যন্ত শতভাগ বেতন দিতে পারলেও বোর্ডের শঙ্কা সামনের দিনগুলোয় পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বেতন ৩০ শতাংশের বেশি দেওয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু এই তথ্যকে আফগান ক্রিকেটাররা বেতনের ৩০ শতাংশ গ্রহণ করছেন দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, আফগান ক্রিকেট বোর্ডের অর্থসংকটের মূল কারণ আফগানিস্তানের ওপর নিষেধাজ্ঞা। গত বছরের আগস্টে দেশটির ক্ষমতা দখল করে তালেবান। প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর কেউই তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকারকে এখনো স্বীকৃতি দেয়নি। এমন অবস্থায় বহির্বিশ্ব থেকে আফগানিস্তানে অর্থ পাঠানোর পথও বন্ধ। যে কারণে এসিবির প্রাপ্য অর্থ দিতে পারছে না আইসিসি।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে আইসিসির পূর্ণ সদস্যের মর্যাদা পায় আফগানিস্তান। এর অন্যতম সুবিধা হচ্ছে আইসিসির বাণিজ্যিক আয়ের ভাগ পাওয়া যায়। লভ্যাংশ হিসেবে এসিবিকে প্রতিবছর ৪.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেয় আইসিসি। একটি অংশ দেওয়া হয় জানুয়ারিতে, অপর অংশ জুলাইয়ে। গত বছর তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার আগের মাসে লভ্যাংশের সর্বশেষ অংশ পায় এসিবি। কিন্তু এ বছর জানুয়ারি–জুলাই দুই মেয়াদেই এসিবিকে টাকা পাঠাতে পারেনি আইসিসি।

সুতরাং, আফগান ক্রিকেটারদের মূল বেতনের ৩০ শতাংশ গ্রহণের দাবিটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img