গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ‘এই মাত্র পাওয়া,,সিলেটে সাদা পাথর পর্যটন এলাকায় পরিদর্শনে গেলে উপদেষ্টা রেজওয়ানার গাড়ি ভাংচুর করেছে উত্তেজিত জনতা,,তিনি কোন রকম সাধারণ জনগণের হাত থেকে বেঁচে ফিরেছেন…’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করা হয়েছে৷

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)৷
ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের গাড়িতে সিলেটের সাদা পাথর এলাকায় হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, গত জুলাইয়ে সিলেটে ইজারা বন্ধ থাকা পাথর কোয়ারি চালুর দাবিতে আন্দোলনরত কিছু ব্যক্তি আঞ্চলিক মহাসড়কে একটি গাড়ি ভাঙচুর করেছিলেন। সেই ঘটনার ভিডিওকেই সম্প্রতি রিজওয়ানা হাসানের গাড়ি ভাঙচুরের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সিলেটে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসানের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলে তা গণমাধ্যমে গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হওয়ার কথা৷ তবে অনুসন্ধানে গণমাধ্য কিংবা সংশ্লিষ্ট কোনো বিশ্বস্ত সূত্রে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো সংবাদ বা তথ্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে ‘Sajed Sylhet-সাজেদ সিলেট’ লিখিত একটি ওয়াটার মার্ক রয়েছে।
উক্ত সূত্র ধরে Sajed Sylhet-সাজেদ সিলেট নাম ফেসবুক পেজে গত ০২ জুলাই প্রকাশিত আলোচিত ভিডিওর অনুরূপ একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর এলাকায় পর্যটকদের গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার দৃশ্য।
অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওর ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
উপরোক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ০১ জুলাই ‘সিলেটে পর্যটকবাহী যানবাহনে আন্দোলনকারীদের হামলা, আটক ২’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে সংযুক্ত হামলার শিকার গাড়ির ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওতে দেখানো ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িটির উল্লেখযোগ্য সাদৃশ্য রয়েছে৷
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সিলেটের পাথর কোয়ারি ইজারা দিয়ে আবার চালু করা ও ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়াসহ কিছু দাবিতে সিলেট জেলা পাথরসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক–শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে গত ০১ জুলাইয়ের কর্মসূচি থেকে একদল ব্যক্তি সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে অবস্থান নেয়। তারা সড়কে অবস্থান নিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টার বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি কোয়ারি চালুর দাবি জানান।
মহাসড়কে অবস্থানকারী ওই ব্যক্তিরা যাতায়াতকারী পর্যটকবাহী মাইক্রোবাস ও ব্যক্তিগত গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে বাধা দেন। দুপুরের দিকে সড়ক অবরোধকারীদের কয়েকজন হঠাৎ সড়ক দিয়ে চলাচলরত সাদাপাথরমুখী কিছু গাড়ির ওপর চড়াও হন। এ সময় তারা হামলা চালিয়ে প্রাইভেট কার, যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ অন্তত পাঁচটি যানবাহন ভাঙচুর করেন।
ভাঙচুরের পরপরই আমিনুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করেন। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, তিনি পরিবার–পরিজন নিয়ে পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর যাচ্ছিলেন। পথে অতর্কিতভাবে তাঁর প্রাইভেট কারে হামলা চালিয়ে কাচ ভাঙচুরের পাশাপাশি পুরো গাড়িটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। গাড়ির ভাঙচুর হওয়া কাচ ভেতরে থাকা যাত্রীদের শরীরেও বিদ্ধ হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ বলেন, কর্মসূচি চলাকালে একটি কালো প্রাইভেট কার ও একটি যাত্রীবাহী গাড়ির কাচ ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে দুজনকে আটক করা হয়েছে।
উক্ত ঘটনার ভাঙচুর হওয়া কালো প্রাইভেট কারের বিষয়ে জানতে প্রতিবেদনে উল্লেখিত আমিনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। তিনি জানান, গাড়িটি তার ব্যক্তিগত ব্যবহারের এবং এর সঙ্গে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসানের কোনো সম্পর্ক নেই। আমিনুল ইসলাম আরও জানান, ১ জুলাই সাদা পাথর ঘুরতে যাওয়ার পথে পাথর কোয়ারির কয়েকজন হঠাৎ তার গাড়িতে হামলা চালায়। তখন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা গাড়িতে ছিলেন। হামলায় তারা আহত হলেও বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে গাড়িটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সুতরাং, সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের সাদা পাথরে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসানের গাড়িতে হামলার দৃশ্য দাবিতে সাদা পাথরগামী পর্যটকবাহী গাড়িতে হামলার ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Sajed Sylhet-সাজেদ সিলেট – Facebook Post
- Prothom Alo – সিলেটে পর্যটকবাহী যানবাহনে আন্দোলনকারীদের হামলা, আটক ২
- Aminul Islam’s Statement