গুজবঃ
আজ রাত 12:30 থেকে 03:30 এ পর্যন্ত ফোন, সেলুলার, ট্যাবলেট, এবং আপনার শরীর থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে su.re করুন। সিঙ্গাপুর টেলিভিশন এই খবর ঘোষণা করেছে। আপনার পরিবার এবং বন্ধুদের বলুন। আজ রাত্রি 12:30 থেকে 03:30 এ, আমাদের গ্রহটি পৃথিবীর নিকটবর্তী হয়ে কসমিক রশ্মি থেকে খুব উচ্চ বিকিরণের সংস্পর্শে আসবে। সুতরাং দয়া করে আপনার সেলফোনগুলি বন্ধ করুন। আপনার ডিভাইসটি আপনার দেহের নিকটে ছেড়ে রাখবেন না, এটি আপনাকে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। গুগল এবং নাসার বিবিসি নিউজ পরীক্ষা করুন। আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত ব্যক্তিকে এই বার্তাটি প্রেরণ করুন।
আসল ফ্যাক্টঃ
মূলত এই গুজবের উৎপত্তি হয় ২০১৬ সালে। এরপর ২০১৭ সালেও একবার গুজবটি অনেক ভাইরাল হয় এবং সিঙ্গাপুর টেলিভিশনে কসমিক রশ্মি নিয়ে কোন প্রতিবেদন আদৌ হয়নি। গুগল, নাসা এবং বিবিসি নিউজেও এই সম্পর্কে কোন প্রতিবেদন করা হয় নি।
কসমিক রশ্মি কি?
Cosmic Ray এর বাংলা হলো মহাজাগতিক রশ্মি।
মহাজাগতিক রশ্মি হলো অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার স্রোত। বহির্বিশ্ব থেকে ওই সব কণা এসে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে। কণার ওই বারিবর্ষণ এক অবিশ্রান্ত প্রক্রিয়া। মহাজাগতিক রশ্মিতে থাকে শতকরা ৮৯ ভাগ প্রোটন, ৯ ভাগ বিকিরণ এবং ২ ভাগ থাকে কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ও লোহার ভারি নিউক্লিয়াস। এগুলোই হলো প্রাইমারি মহাজাগতিক রশ্মি। প্রায় আলোর বেগেই ওরা ছুটে চলে।
প্রাইমারি মহাজাগতিক রশ্মির ওই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার যখন বায়ুমেন্ডলের বিভিন্ন পদার্থের নিউক্লিয়াসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় তখন নতুন কণার সৃষ্টি হয়। নতুন কণাদের তখন বলা হয় সেকেন্ডারি মহাজাগতিক রশ্মি। সেকেন্ডারি মহাজাগতিক রশ্মির কণারাও প্রচন্ড বেগে ছুটে চলে। অন্যান্য পরমাণুর সঙ্গে ওদের আবার সংঘর্ষ হয় এবং আবার নতুন পদার্থ কণা ওরা সৃষ্টি করে। চলার পথে বহুবার সংঘর্ষ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত পৃথিবী পৃষ্ঠে সেকেন্ডারি মহাজাগতিক রশ্মির খুব কম সংখ্যক কণারাই এসে পৌঁছতে পারে। সেকেন্ডারি মহাজাগতিক রশ্মিতে থাকে প্রধানত পজিট্রন, নিউট্রন, মেসন, নিউট্রিনো প্রভৃতি। এ সব কণাদের বলা হয় প্রাথমিক বা মৌলিক কণা।
এখন প্রশ্ন হলো মহাশূন্যে ওই মহাজাগতিক রশ্মির উৎস কোথায়? এটাই বিশ্বাস করা হয় যে অধিকাংশ মহাজাগতিক রশ্মির সৃষ্টি আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথের বাইরে মহাশূন্যে ছায়াপথের নানা তারায়। মহাজাগতিক রশ্মির উৎস সম্পর্কে আরো অনেক তথ্য সংগৃহীত হচ্ছে।
মহাজাগতিক রশ্মির সামান্য পরিমাণ বিকিরণ পৃথিবীর কোনো ক্ষতি করার জন্য যথেষ্ট নয়। কোটি কোটি বছর ধরে এই রশ্মি পৃথিবীকে আঘাত করে আসছে। কিন্তু তাতে পৃথিবীবক্ষের প্রাণীর খুব কম ক্ষতিই সাধিত হয়েছে। তাই বিশ্বাস করা হয় যে, মহাজাগতিক রশ্মি ক্ষতিকারক নয় (পৃথিবী পৃষ্ঠে)। তবে মহাশূন্যচারীদের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব থাকার সম্ভাবনা আছে। কারণ পৃথিবী পৃষ্ঠের চেয়ে শূন্যে মহাজাগতিক রশ্মির তীব্রতা অনেক অনেক বেশি।