নির্বাচনের মাঠে পুলিশ-সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের ভুয়া দাবি প্রচার

সম্প্রতি, হঠাৎ নির্বাচনের মাঠে পুলিশ সেনাবাহিনী তুমুল সংঘর্ষ ভয়ে শেখ হাসিনা শীর্ষক শিরোনাম এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

পুলিশ-সেনাবাহিনীর সংঘর্ষে

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় এক হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ-সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনো সংঘর্ষ হয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

ভিডিও যাচাই ০১

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় ২ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের একটি ভিডিও বক্তব্য লক্ষ্য করা যায়।

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া NEWS24 এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ৫ আগস্টে “সিনহা হত্যার দায় ব্যক্তির, বাহিনীর নয় | সেনা ও পুলিশ প্রধানের যৌথ সংবাদ সম্মেলন” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের নিহত হওয়া নিয়ে সেনাবাহিনীর অবস্থান নিয়ে কথা বলেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি বলেন, “আমর এই ঘটনাকে একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখতে চাই। এই ঘটনার সাথে যারা সম্পৃক্ত থাকবে সেটার দায় দায়িত্ব কোনো প্রতিষ্ঠানের হতে পারে না। ইনকুয়েরি টিম যাদের দোষী সাব্যস্ত করবে তারা সেই দোষের প্রায়শ্চিত্ত করবেন।

ভিডিও যাচাই ০২

প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ অনুসন্ধান করে, kanaksarwarNEWS নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৪ ডিসেম্বর “আন ল’ফুল কমান্ড মানতে বাধ্য না সেনাবাহিনী-মেজর জেনারেল এহতেশাম-উল হল” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত উক্ত সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিও থেকে জানা যায়, বিশিষ্ট সাংবাদিক কনক সারওয়ার এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মেজর জেনারেল এহতেশামুল হক বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তবে উক্ত আলোচনায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে পুলিশ-সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনো সংঘর্ষ নিয়ে কথা হয়নি।

এছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ-সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হওয়ার প্রেক্ষিতে দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে বিএনপি- জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্যের প্রচার হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ-সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেনি এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করেনি। প্রকৃতপক্ষে ২০২০ সালে মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সেনাবাহিনীর অবস্থান নিয়ে দেওয়া বক্তব্য এবং গত ২৪ ডিসেম্বর বিশিষ্ট সাংবাদিক কনক সারওয়ার এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মেজর জেনারেল এহতেশামুল হক বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনার ভিডিও একত্রে যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ-সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img