নতুন শিক্ষা কারিকুলামের প্রশিক্ষণ দাবিতে হিন্দি ছড়া আবৃত্তি করে শিক্ষকদের গোল নৃত্যের ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়

সম্প্রতি, নতুন জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামের বিষয়ে ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। এর মধ্যেই একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে, কতিপয় নারী-পুরুষ একটি ছড়া সদৃশ গানের মাধ্যমে গোল হয়ে নৃত্য করছেন। দাবি করা হচ্ছে, এটি বাংলাদেশ সরকারের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকের কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

উল্লিখিত ভিডিওগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি ভিডিওগুলো প্রায় ছয় লক্ষাধিক বার দেখা হয়েছে। ভাইরাল পোস্টগুলোর মন্তব্যঘর ঘুরে পোস্টটির দাবির প্রেক্ষিতে অধিকাংশ নেটিজেনকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়।

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হিন্দি ছড়া আবৃত্তি করে শিক্ষকদের গোল নৃত্যের ভিডিওটি দেশের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের অধীনে কোনো শিক্ষক প্রশিক্ষণের দৃশ্য নয় বরং ভারত ও পাকিস্তানে বিভিন্ন সময়ে ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওটি অন্তত ২০১৯ সাল থেকেই ইন্টারনেটে রয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, কিছু ব্যক্তি গোল হয়ে দাঁড়িয়ে বিশেষ ভঙ্গির মাধ্যমে হিন্দিতে যা উচ্চারণ করছেন তার তা হলো, 

মাম্মি কি রুটি গোল গোল, পাপা কি পেইসে গোল গোল। 

আমরা এই লাইনগুলো কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধানে দেখেছি, এটি ভারতে বহুল প্রচলিত একটি হিন্দি ছড়া। 

ইংরেজি বর্ণে যা লিখলে দাঁড়ায়, 

Mummy ki roti gol gol,

Papa ka paisa gol gol,

Dada ka chashma gol gol,

Dadi kee bindiya gol gol,

Upar pankha gol- gol

Niche dharti gol –gol

Chanda gol Suraj gol

Ham bhi gol tum bhi gol

Saari duniya gol–matol

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের কিছু ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আলোচিত ভিডিওটি (, , , ) পোস্ট করতে দেখা যায়৷ তবে এই পোস্টগুলোর ক্যাপশনে ভিডিওটির সূত্রের বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

Screenshot: Facebook 

২০২১ সালেও ভারতে আলোচিত ভিডিওটি (আর্কাইভ) প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।

রিউমর স্ক্যানার টিম ভিডিওটির প্রকৃত সূত্র অনুসন্ধানে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের একাধিক অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে একই ভিডিও পোস্ট করতে দেখেছে। 

১১ ফেব্রুয়ারি Imran Nasir নামে দুইটি অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট (, ) করা হয়৷ 

Screenshot: Facebook

একই মাসে পাকিস্তানভিত্তিক আরও কিছু অ্যাকাউন্ট এবং পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। দেখুন এখানে, এখানে। 

তবে পাকিস্তানের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টচেক পাকিস্তানের ফ্যাক্টচেকার আহমের খান (Ahmer Khan) রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, তারা নিশ্চিত যে এটা পাকিস্তানের কোনো দৃশ্য নয়৷ 

রিউমর স্ক্যানার টিম সে বছরের ফেব্রুয়ারিতেই ভারতের কতিপয় পেজ থেকেও একই ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে। এর মধ্যে ০৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ভারতের হায়দারাবাদ ভিত্তিক একটি পেজে ভিডিওটি (আর্কাইভ) শেয়ার হতে দেখা যায়। 

Screenshot: Facebook

তবে এ সকল পোস্টগুলোর ক্যাপশনে ভিডিওটির সূত্রের বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

ফেসবুকে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিগত বিভিন্ন সময়ে এই ছড়াটি শিক্ষার্থীদের আবৃত্তি করার পোস্ট নজরে এসেছে আমাদের৷ দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।

ভারতের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ফ্যাক্টচেকার অন্কিতা দেশকার (Ankita Deshkar) রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, এটি ভারতের কোনো পাঠ্যবইয়ে নেই। তবে শিশুরা মজাচ্ছলে এটি আবৃত্তি করে থাকে। ভারতের আরেক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টলি’র ফ্যাক্টচেকার ভারত গুনিগান্টি’ও (Bharath Guniganti) একই মত দিয়েছেন। 

মূলত, সম্প্রতি নতুন শিক্ষা কারিকুলামের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে, কতিপয় নারী-পুরুষ একটি ছড়া সদৃশ গানের মাধ্যমে গোল হয়ে নৃত্য করছেন। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় এবং এই ভিডিওর দৃশ্যের সাথে নতুন শিক্ষা কারিকুলামের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণেরও কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, অন্তত ২০১৯ সাল থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। ভিডিওতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যে ছড়াটি আবৃত্তি করছেন সেটি ভারতে বহুল প্রচলিত একটি শিশু ছড়া হলেও এটি পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভূক্ত নেই বলে ভারতের একজন ফ্যাক্টচেকার রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন।  

সুতরাং, অন্তত ২০১৯ সাল থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান ভারত ও পাকিস্তানে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওকে সম্প্রতি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে এটিকে বাংলাদেশের নতুন শিক্ষা কারিকুলামের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

হালনাগাদ/ Update

০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকে একই দাবি সম্বলিত ভিডিও আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে একটি টিকটক পোস্টকে প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।

আরও পড়ুন

spot_img