সম্প্রতি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসঙ্গে ‘আমরা পাহাড়ের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেব। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমি এটা স্পষ্ট করে বলছি। কোন সন্ত্রাসী থাকতে পারবে না। কারণ সেখানে সেনাবাহিনী রয়েছে। সেনাবাহিনী যেখানে থাকবে সেখানে কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী উৎপন্ন হতে পারবে না।’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। প্রচারিত ভিডিওটিতে তাকে এমন মন্তব্য করতে দেখা যায়।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ফেসবুকে প্রচারিত উক্ত ভিডিও প্রায় ৪৮ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে ৩ হাজারের অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ভিডিওটিতে ২০৯টি মন্তব্য করা হয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৭০০ বার ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসঙ্গে আলোচিত মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে, একটি ভিন্ন ঘটনার সংবাদ সম্মেলনে ধারণ অরা তার ছবি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহায়তায় ভিডিওতে রূপান্তর করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামানের পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসঙ্গে আলোচিত মন্তব্যটি করার সত্যতা মেলেনি।
পরবর্তীতে এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখে রিউমর স্ক্যানার। পর্যালোচনায় মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামানের কথা বলার ধরনের ক্ষেত্রে কিছুটা অসাঞ্জস্যতা লক্ষ্য করা যায়। তার কথা বলার মধ্যে কিছুটা কৃত্রিমতা লক্ষ্য করা যায়, যা সাধারণত এআই দিয়ে তৈরি ভিডিওতে দেখা যায়।
পরবর্তীতে ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় নির্মিত কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ডিপফেক-ও-মিটারের ‘DSP-FWA (2019)’ মডেলের সহয়তায় ভিডিওটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৭৮ শতাংশ।

ভিডিওটি তৈরিতে ব্যবহৃত সম্ভাব্য ছবি বা ভিডিওর বিষয়ে অনুসন্ধানে, গত ১১ অক্টোবর যমুনা টেলিভিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের ফিচার ইমেজে ব্যবহৃত মো. হাকিমুজ্জামানের ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওর উল্লেখযোগ্য মিল রয়েছে। ফলে প্রতীয়মান হয়, তার এই ছবিটি ব্যবহার করেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছবিটি গত ১১ অক্টোবর সেনাসদরের অফিসার্স মেসে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সাবেক ও বর্তমান ২৫ জন সেনা কর্মকর্তার বিষয়ে দেওয়া এক ব্রিফিংয়ের সময় ধারণ করা। সেদিনের ব্রিফিংয়ের ভিডিও ও এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে তাকে সেদিন পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়ে আলোচিত মন্তব্য কিংবা প্রাসঙ্গিক কোনো আলাপ করতেও শোনা যায়নি।
সুতরাং, এআই দিয়ে তৈরি ভিডিওকে মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামানের পাহাড়ি সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে বক্তব্য প্রদানের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Jamuna TV Website: ওয়ারেন্টভুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে, হদিস নেই একজনের: সেনা সদর
- Ekattor TV Youtube Channel: মেজর জেনারেল কবির না জানিয়ে অবৈধভাবে ছুটিতে আছেন: মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান
- Rumor Scanner’s Analysis





