পটুয়াখালীতে ছাত্রলীগ কর্মীর গাছে উঠার দৃশ্য দাবিতে ভিন্ন ঘটনার ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, পটুয়াখালীর দশমিনায় ভুয়া মামলার শিকার কথিত এক ছাত্রলীগ কর্মী মবের হাত থেকে রক্ষা পেতে গাছের মগডালে উঠে আশ্রয় নেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। প্রচারিত পোস্টগুলোতে বলা হয়, মবের হাত থেকে রক্ষা পেতে গাছে উঠলেও পরবর্তীতে তিনি উত্তেজিত জনতার হাতে ধরা পড়েন। ভিডিওগুলোতেও উক্ত ব্যক্তিকে গাছ থেকে নামিয়ে আনতে দেখা যায়।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।  

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত একই ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পটুয়াখালীর দশমিনায় ভুয়া মামলার শিকার হয়ে ছাত্রলীগ কর্মীর মবের হাত থেকে রক্ষা পেতে গাছের মগডালে উঠে আশ্রয় নেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, গাছের মগডালে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিটি মানসিক ভারসাম্যহীন। নারী-শিশুসহ ছয়জনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপানোর পর স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তিনি রক্ষা পেতে গাছে উঠে যান। 

আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওগুলো পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার ভিডিওগুলোতে ‘আমাদের পটুয়াখালী’ শীর্ষক একটি লেখা থাকার সূত্রে ‘আমাদের পটুয়াখালী’ নামে পটুয়াখালীর একটি স্থানীয় গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে গত ৯ অক্টোবর প্রচারিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। তবে ভিডিওর শিরোনামে ‘দশমিনায় গ্রেফ’তার এড়াতে গাছের মগডালে উঠে পরা যুবককে নামানো হচ্ছে …’ শীর্ষক তথ্য ব্যতীত বিস্তারিত কোনো তথ্য না থাকায় ঘটনাটি সম্পর্কে জানা যায়নি। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

আরেক স্থানীয় গণমাধ্যম Voice of Marichbunia এর ফেসবুক পেজে একই ঘটনার ভিন্ন আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিও পোস্টটির শিরোনামে বলা হয়, আলোচিত ওই ব্যক্তির নাম সবুজ। তার বাড়ি পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার চর হোসনাবাদ গ্রামে। তিনি মাদকাসক্ত হয়ে নিজ বাড়ির ৭ জনকে কুপিয়ে জখম করেন। যাদের মধ্যে আহত এক শিশু হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। পরবর্তীতে তিনি উত্তেজিত জনতার হাত থেকে রক্ষা পেতে গাছের মগডালে উঠে যান। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সহায়তায় তাকে নামানো হয় বলেও পোস্টটিতে উল্লেখ করা হয়। 

Screenshot: Facebook 

মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একই ঘটনা সম্পর্কিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অভিযুক্ত সবুজ দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্তির ফলে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। গত ৯ অক্টোবর বিকেলে কোনো কারণ ছাড়াই একই বাড়ির ছয়জনকে দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করেন সবুজ। এ সময় ভুক্তভোগীদের চিৎকারে পাশের বাড়ির লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। লোকজনের উপস্থিতি দেখে ভয়ে তিনি একটি গাছের মগডালে আশ্রয় নেন। পরবর্তীতে রাতে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যদের সহায়তায় তাঁকে গাছ থেকে নামিয়ে আনা হয় বলেও জানা যায়। এছাড়াও আহতদের মধ্যে সাফায়েত হোসেন নামের আট বছরের এক শিশু হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান বলেও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়।

অভিযুক্ত সবুজ গাছে অবস্থানকালীন সময়ে হাতে থাকা দা দিয়ে নিজের হাত ও শরীরের একাধিক স্থানে জখম করায় তারও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এ ঘটনায় পরবর্তীতে মামলা দায়ের করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রতিবেদনটিতে দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ আবদুল আলীমের বরাতে জানানো হয়। তবে প্রতিবেদনটির কোথাও সবুজের ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টতা কিংবা ভুয়া মামলার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অন্যকোনো গণমাধ্যমে এ ঘটনায় প্রকাশিত কোনো প্রতিবেদনেও এর কিছুর উল্লেখ নেই।

সুতরাং, পটুয়াখালীতে ভুয়া মামলার শিকার কথিত ছাত্রলীগ কর্মীর মবের হাত থেকে রক্ষা পেতে গাছের মগডালে উঠে আশ্রয় নেওয়ার দাবিতে একই এলাকার মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির ভিন্ন ঘটনার ব্যক্তির ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img