গত ১২ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘মধ্যরাতে জেনারেল ওয়াকার গ্রেফতার দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করলো লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজমাতুল্লাহ’ শীর্ষক শিরোনামে কালের কণ্ঠের লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ফটোকার্ড দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের গ্রেফতার ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজমাতুল্লাহ নামের কথিত সেনা কর্মকর্তার দেশের ক্ষমতা গ্রহণের দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট কর্ণেল আজমাতুল্লাহ নামের কোনো সেনা কর্মকর্তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। এছাড়াও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে গ্রেফতারও করা হয়নি। মূলত, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় কালের কণ্ঠের লোগো ব্যবহার করে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গণমাধ্যম, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ফেসবুক পেজ কিংবা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে গ্রেফতারের তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়াও লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজমাতুল্লাহ নামের কথিত সেনা কর্মকর্তার ক্ষমতা গ্রহণের বিষয়েও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এতে কালের কণ্ঠের লোগো এবং ফটোকার্ডটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ১২ অক্টোবর, ২০২৫ উল্লেখ রয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণে উল্লিখিত তারিখে (১২ অক্টোবর, ২০২৫) কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের কোনো ফটোকার্ড প্রকাশের প্রমাণ মেলেনি। তাছাড়া গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটেও এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।
পাশাপাশি কালের কণ্ঠের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলোর সাথে উক্ত ফটোকার্ডের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, উভয় ফটোকার্ডের মাঝে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। কালের কণ্ঠের ফটোকার্ডে গণমাধ্যমটির নামের ফন্ট সাইজ বড়। অপরদিকে আলোচিত ফটোকার্ডে সেটি তুলনামূলক ছোট। এছাড়াও আলোচিত ফটোকার্ডে ছবির নিচে কালের কণ্ঠের লোগো থাকলেও আলোচিত ফটোকার্ডে সেটি অনুপস্থিত। পাশাপাশি আলোচিত ফটোকার্ডে বিস্তারিত কমেন্টে লেখাটি লাল বক্সে লেখা থাকলেও কালের কণ্ঠের ফটোকার্ডে সেটি ভিন্ন। এগুলো ছাড়াও ফটোকার্ড দুটিতে বেশ কিছু দৃশ্যমান পার্থক্য রয়েছে।

কালের কণ্ঠের উক্ত ডিজাইনের বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২৪ সালে কালের কণ্ঠ ফটোকার্ড তৈরিতে আলোচিত ফটোকার্ডটিতে ব্যবহৃত ফরমেট ব্যবহার করতো। ধারণা করা যাচ্ছে সে বছরের ১২ অক্টোবরে প্রচারিত উক্ত ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। কারণ আলোচিত ফটোকার্ডে সেনা কর্মকর্তার ছবির দুইপাশে কালো রঙ দেখা যাচ্ছে। উক্ত ফটোকার্ডটিতে ব্যবহৃত ট্রাম্পের ছবির একই স্থানে কালো রঙ রয়েছে।

পরবর্তীতে দাবিটির সূত্রপাত অনুসন্ধানে আজ রাত ২ টা ৫৯ মিনিটে Kutub Uddin নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এই দাবির সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়। ওই পোস্টে কালের কণ্ঠের নাম উল্লেখ করা হলেও কোনো প্রতিবেদনের লিংক, স্ক্রিনশট বা ভিডিও যুক্ত করা হয়নি। অর্থাৎ, এই দাবির ভিত্তি একটি অনির্ভরযোগ্য ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্ট।

এছাড়াও উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে এতে কালের কণ্ঠের নামে প্রচারিত এমন বেশ কিছু ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। পাশাপাশি অ্যাকাউন্টটির অ্যাবাউট সেকশন উল্লেখ রয়েছে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গুজব বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত অ্যাকাউন্টধারী ব্যক্তি সার্কাজম হিসেবে পোস্টগুলো তৈরি এবং প্রচার করেছেন। তবে সেটি পরবর্তীতে ফেসবুকে বাস্তব দাবিতে ছড়িয়ে পড়েছে।
পরবর্তীতে আলোচিত ফটোকার্ডে ব্যবহৃত সেনা কর্মকর্তার বিষয়ে জানতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে Grate Grand Masti নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০১৭ সালের ১২ জানুয়ারি প্রচারিত একটি পোস্টে একই সেনা কর্মকর্তার ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

পোস্টটিতে উল্লেখ করা হয়, উক্ত সেনা কর্মকর্তার নাম লেফটেন্যান্ট কর্নেল তৌহিদ। উক্ত ব্যক্তির ছবিতেও তার ব্যাজে তৌহিদ নামটি লেখা দেখতে পাওয়া যায়। তবে পরবর্তী অনুসন্ধানে তার বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু এটি নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে উক্ত ব্যক্তির নাম লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজমাতুল্লাহ নয়।
কথিত সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজমাতুল্লাহ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিউমর স্ক্যানার টিম এমন নামের কোনো ব্যক্তির সন্ধান পায়নি। এছাড়া সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের তালিকা যাচাই করেও এই নামে কোনো লেফটেন্যান্ট কর্নেল পাওয়া যায়নি। উক্ত নাম ব্যবহার করে পূর্বেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হলেও সেসময় তথ্যটি গুজব হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
অর্থাৎ, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে কালের কণ্ঠের নাম ব্যবহার করে সেনাবাহিনীর সম্পর্কে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে গ্রেফতার করে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজমাতুল্লাহ নামের কথিত সেনা কর্মকর্তার দেশের ক্ষমতা গ্রহণের দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।