গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে গাজার ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামে একটি নৌবহর যাত্রা শুরু করে। এই মিশনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অ্যাক্টিভিস্ট, সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মীরা অংশ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতেও আরো জাহাজ গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওটি ফ্লোটিলা সমর্থনে চীনে বিক্ষোভের দৃশ্যের।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত পোস্টটি ৯ লক্ষেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং ৯৪ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ফ্লোটিলা সমর্থনে চীনে বিক্ষোভের দৃশ্যের নয়। বরং এটি গত ১ অক্টোবরে চীনের জাতীয় দিবস উপলক্ষে চীনের নানচ্যাংয়ে আতশবাজির ঘটনার ভিডিও।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কী-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স সার্চে চীনা সরকারি সংবাদমাধ্যম ‘চীনা সিনহুয়া নিউজ’ এর ফেসবুক পেজে গত ৩ অক্টোবরে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে মিল পাওয়া যায়। ভিডিওটি সম্পর্কে ক্যাপশনে বলা হয়, ‘এমন ভিড় নড়াচড়া আপনি আগে কখনও দেখেননি। আতশবাজির প্রদর্শনীর পর কীভাবে ১২ লক্ষ মানুষকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া যায়? চীনের নানচ্যাং-এ দেখা গেল এই অবিশ্বাস্য দৃশ্য। ##নানচ্যাং #চীন #জাতীয়দিবস #আতশবাজিপ্রদর্শনী’ (অনূদিত)

ক্যাপশনে কোথাও ফিলিস্তিনের পক্ষের ফ্লোটিলার কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি। এ থেকে বুঝা যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি চীনের জাতীয় দিবস উপলক্ষে হওয়া আতশবাজির ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত।
অনুসন্ধানে চীন ভিত্তিক আরেক সংবাদমাধ্যম ‘নিউ চীনা টিভি’ এর ইউটিউব চ্যানেলেও আলোচিত ভিডিওটি চীনের জাতীয় দিবস উপলক্ষে হওয়া আতশবাজির ঘটনার দাবিতে গত ৩ অক্টোবরে প্রচার হতে দেখা যায়। একই দাবিতে আরো একাধিক চীন ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকেও আলোচিত ঘটনার ভিডিওটি পোস্ট হতে দেখা যায়।
পরবর্তীতে এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে চীন ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম তেনসেন্ট এর ওয়েবসাইটে গত ৪ অক্টোবরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের এক পর্যায়ে বলা হয়, ‘দশ লক্ষাধিক দর্শক আতশবাজি উপভোগ করেছেন, এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দর্শনার্থীদের চলাচল ছিল সুসংগঠিত। ১ অক্টোবর সন্ধ্যায় চীনের জিয়াংসি প্রদেশের নানচ্যাং শহরে জাতীয় দিবসের আতশবাজি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচ হাজার ড্রোন ও ৫০,০০০-এরও বেশি আতশবাজি আকাশ আলোকিত করে তোলে, যা গ্যান নদীর তীরে প্রায় ১২ লক্ষ নাগরিক ও পর্যটককে আকর্ষণ করে। আরও উল্লেখযোগ্য ছিল প্রদর্শনীর পর শহরজুড়ে দর্শকদের সুশৃঙ্খল ও দ্রুত প্রস্থান, যা পরিচালনা করেন জননিরাপত্তা ও সশস্ত্র পুলিশ সদস্যরা।’ (স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনূদিত)
সুতরাং, গত ১ অক্টোবরে চীনের জাতীয় দিবস উপলক্ষে চীনের নানচ্যাংয়ে আতশবাজির ঘটনার দৃশ্যকে ফিলিস্তিনের পক্ষে ফ্লোটিলা সমর্থনে চীনে বিক্ষোভের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- China Xinhua News – Facebook Post
- New China TV – YouTube Post
- Tencent – 从比拼“硬件”到升级“软件” 各景区实力“宠客”提升旅游舒适感和体验感
- Rumor Scanner’s analysis