বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে সেনা অভিযানে অস্ত্র উদ্ধারের দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি, সেনাবাহিনীর অভিযানে বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে সেনা কর্মকর্তাদের মাটি খুঁড়ে বেশকিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করতে দেখা যায়। পাশাপাশি ভিডিওটিতে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত একটি রুমেও সেনা সদস্যদের অভিযান চালানে দেখা যায়। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে সেনাবাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের দাবিটি সঠিক নয়। প্রচারিত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও গাজীপুরের টঙ্গীর একটি বস্তিতে চালানো সেনা অভিযানের পৃথক দুটি ভিডিওকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভিডিওটিতে সেনা অভিযানের দুটো ভিডিও একসঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। যার প্রথমটি এশিয়ান টেলিভিশন এবং দ্বিতীয়টি চ্যানেল ২৪-এর ফুটেজ। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে তাই ভিডিওগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার।

এশিয়ান টেলিভিশনের ফুটেজ যাচাই

আলোচিত ভিডিওটির শুরুতে দেখতে পাওয়া সেনা অভিযানের ফুটেজটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রির্ভাস ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Asian Television এর ফেসবুক পেজে গত ৫ জুলাই প্রচারিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটির শিরোনামে সেনাবাহিনীর উক্ত অভিযানের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য না থাকায় মাটি খুঁড়ে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাটি কোথাকার তা জানা যায়নি। পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম একাত্তর টেলিভিশনের ওয়েবসাইটে সেদিনের সেনা অভিযানের ঘটনায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটির ফিচার ইমেজে সেদিনের অভিযানে অস্ত্রসহ আটক ব্যক্তিদের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। যাদের আলোচিত ভিডিওটিতেও দেখতে পাওয়া যায়। 

পাশাপাশি প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ৪ জুলাই দিবাগত রাতে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে পরিচালিত এক সেনা অভিযানে উক্ত ব্যক্তিরা গ্রেফতার হন। এসময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত চারজনই চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তবে তারা বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত আছে এমন কোনো তথ্য উক্ত প্রতিবেদন কিংবা অন্যকোনো গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও সেদিন অস্ত্রগুলো বিএনপির কার্যালয় থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এমন তথ্যও পাওয়া যায়নি।

চ্যানেল ২৪-এর ফুটেজ যাচাই

চ্যানেল ২৪ এর ফুটেজটির বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গত ১ মে Channel 24-এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১ মার্চ প্রচারিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটির শিরোনাম  এবং গণমাধ্যমকর্মীর বর্ণনা থেকে জানা যায়, এটি টঙ্গীর একটি বস্তিতে সেনাবাহিনীর পরিচালিত একটি অভিযানের ভিডিও। ভিডিওটিতে দেখতে পাওয়া যায়, অপরাধ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা উক্ত বস্তিতে সুড়ঙ্গের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। সুড়ঙ্গগুলোতে অভিযান চালাতে গিয়ে সেনা সদস্যদের জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ওই রুম আবিষ্কার করতে দেখা যায় ভিডিওটিতে। তবে রুমটি থেকে তাদের কোনো ধরনের অস্ত্র উদ্ধার করতে দেখা যায়নি।

পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর উক্ত অভিযানের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধানে অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম আমাদের সময়-এর ওয়েবসাইটে গত ২ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর অংশ হিসেবে গত ১ মার্চ গাজীপুরের টঙ্গীর ওই বস্তিতে অভিযান চালানো হয়। সেনাবাহিনীর অভিযানে সেদিন বিপুল পরিমাণ মাদক ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি প্রায় ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয় বলেও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়। 

অর্থাৎ, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের এবং গাজীপুরের টঙ্গীর একটি বস্তিতে চালানো সেনা অভিযানের পৃথক দুটি ভিডিওকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

সুতরাং, বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের এই দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img