গাজায় চলমান ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধের প্রতিবাদে গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীদের ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার নৌ উদ্যোগ গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। পরবর্তীতে ১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর তিউনিসিয়া, ইতালির সিসিলি দ্বীপ ও গ্রিসের সাইরাস দ্বীপ থেকে আরও কিছু নৌযান ত্রাণ নিয়ে বহরে যুক্ত হয়। এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, দেশীয় একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সুমুদ ফ্লোটিলা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উক্ত নৌবহরের দৃশ্য দাবিতে একটি ছবি প্রচার করা হয়।

গণমাধ্যমে প্রচারিত এমন প্রতিবেদন দেখুন ইত্তেফাক, ডেইলি সান, দ্য ডেইলি স্টার, কালবেলা, যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন, খোলা কাগজ, আমার দেশ, মানবকণ্ঠ, সময়ের কণ্ঠস্বর, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, মানবজমিন, ঢাকা মেইল, জনকণ্ঠ, বিডি২৪রিপোর্ট, ডিবিসি নিউজ, একাত্তর টিভি, দেশ টিভি, চ্যানেল২৪, যমুনা টিভি, একুশে টিভি, এখন টিভি, এসএ টিভি, এটিএন নিউজ, এটিএন বাংলা, চ্যানেল ওয়ান, ঢাকা জার্নাল, দৈনিক সংগ্রাম, সংবাদ প্রকাশ, একুশে সংবাদ, দৈনিক আজাদী, শেয়ার নিউজ২৪, নিউজ৭১, দৈনিক সারাদেশ, ডেল্টা টাইমস এবং বিডি টুডে।
গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে।
গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে।
টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সুমুদ ফ্লোটিলার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ছবিটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, আলোচিত ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে যা কোনোরূপ সতর্ক বার্তা ব্যতিত গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
আলোচিত ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে cybertechweb ইউজারনেমের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ৩ সেপ্টেম্বর সুমুদ ফ্লোটিলা সংক্রান্ত করা একটি পোস্টের সন্ধান পাওয়া যায়।

পোস্টটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দেশীয় গণমাধ্যমগুলোতে সুমুদ ফ্লোটিলার ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটির সাথে উক্ত পোস্টে ব্যবহৃত সুমুদ ফ্লোটিলার ছবির মিল রয়েছে। তবে ছবিটি সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করলে, এর নিচের ডান কোণে গুগলের জেমিনি এআইয়ের জলছাপও লক্ষ্য করা যায়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২৬ আগস্ট গুগল ডিপমাইন্ড ‘ন্যানো বানানা’ নামে একটি উন্নত ইমেজ এডিটিং মডেল উন্মোচন করেছে, যা বর্তমানে গুগলের এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট জেমিনির মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। এই মডেল ব্যবহারকারীদের উন্নত ও সৃজনশীলভাবে ছবি সম্পাদনার সুযোগ প্রদান করে।
পরবর্তীতে আলোচিত এই ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় নির্মিত কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম Deepfake-O-Meter এ ছবিটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৭৫ শতাংশ।

অর্থাৎ, এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে, আলোচিত ছবিটি গুগলের এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট জেমিনি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, দেশীয় গণমাধ্যমগুলো উক্ত ছবিটি কোনোরূপ এআই সতর্কতা ব্যতীত ছবির সূত্র ব্যবহার ব্যতিত তাদের প্রতিবেদনে ফিচার ইমেজ এবং ইউটিউব-ফেসবুকের থাম্বনেইল হিসেবে ব্যবহার করেছে। তাই উক্ত প্রতিবেদনগুলোকেও এই ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে ক্লেইম হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
সুতরাং, সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের ছবি দাবিতে গণমাধ্যমে এআই দিয়ে তৈরি একটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Cybertechweb Instagram Post
- Deepfake-O-Meter
- Rumor Scanner’s Analysis