খাগড়াছড়ির সংঘর্ষে রিকন চাকমা নামের যুবকের মৃত্যুর দাবি মিথ্যা

খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় স্কুলশিক্ষার্থী ধর্ষণের প্রতিবাদের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বাঙালিদের সঙ্গে জুম্ম ছাত্র জনতার সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্তত ৩ জন নিহত হয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে, রিকন চাকমা নামের আহত এক যুবকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে সেদিনের সংঘর্ষে তিনিও নিহত হয়েছেন।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এক্স (সাবেক টুইটার)-এ প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, খাগড়াছড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে রিকন চাকমা নামের ওই যুবক গুরুতরভাবে আহত হলেও মারা যাননি। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।

আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Jeet Chakma এবং ‍Suman Chakma নামের দুজন ব্যক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২৭ সেপ্টেম্বর করা দুটি পোস্টের সন্ধান পাওয়া যায়। পোস্টগুলোর মাধ্যমে জানানো হয়, খাগড়াছড়ির সংঘর্ষে রিকন চাকমা গুরুতর আহত হলেও মারা যাননি। এছাড়াও পোস্টগুলোতে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রিকন চাকমার চিকিৎসার জন্যে আর্থিক সহায়তার আবেদন জানানো হয়।

Collage by Rumor Scanner

পরবর্তীতে রিকন চাকমার বিষয়ে অনুসন্ধানে Dewan Sunil নামের একজন ব্যক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সন্ধান মেলে। সুনীলের ফেসবুক প্রোফাইল পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখা যায়, গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাত থেকে তিনি সশরীরে রিকন চাকমার সঙ্গে থেকে তার শারীরিক অবস্থার হালনাগাদ জানিয়ে একাধিক পোস্ট করছেন। রিকন চাকমার শারীরিক অবস্থা নিয়ে তার করা পোস্টগুলো পাওয়া যাবে – এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

Collage by Rumor Scanner

পোস্টগুলো থেকে জানা যায়, গুরুতর আহত অবস্থায় রিকনকে খাগড়াছড়ির পার্কসাইড হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখান থেকে চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে চট্টগ্রামে নেওয়া হলে ডাক্তাররা জানান, মাথায় আঘাত পাওয়া কারণে রিকনের মস্কিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছে। সকলের সহযোগিতায় পরবর্তীতে রিকনের মস্কিষ্কের অপারেশন করে জমাট বাঁধার রক্ত অপসারণ করা হয়। বর্তমানে রিকন চাকমার জ্ঞান ফিরেছে এবং তিনি কথা বলতে পারছেন জানিয়ে সুনীল তার সর্বশেষ পোস্টটি করেন। এছাড়া তার পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত ছবি থেকে জানা যায়, রিকন চট্টগ্রাম স্পেশিয়ালাইজড ট্রিটমেন্ট এন্ড ট্রামা সেন্টার নামের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

পরবর্তীতে খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষে নিহত তিনজনের পরিচয়ের বিষয়ে জানতে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ২৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে গুলিতে নিহত তিনজনের পরিচয় শনাক্ত, দুই সড়কে অবরোধ শিথিল শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত তিনজন হলেন, গুইমারা উপজেলার সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের দেবলছড়ি চেয়ারম্যান পাড়ার আথুই মারমা (২১), হাফছড়ি ইউনিয়নের সাং চেং গুলিপাড়ার আথ্রাউ মারমা (২২) ও রামসু বাজার বটতলার তৈইচিং মারমা (২০)। নিহতরা প্রত্যেকে গুলিতে নিহত হয়েছেন বলেও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়। 

সুতরাং, খাগড়াছড়িতে স্কুলশিক্ষার্থী ধর্ষণের প্রতিবাদের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে জুম্ম জনতার সংঘর্ষে রিকন চাকমা নামের যুবক মারা গিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img