গত ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে অবরোধের মধ্যে উত্তেজনা ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। চলমান জুম্ম ছাত্র-জনতার সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে অন্তত ৩ জন নিহত হয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে অন্তত গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি প্রচার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘জলপাই বাহিনী পাহাড়ি আদিবাসীদে বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে | আসল রহস্য তো এখানেই।’
অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে প্রচারিত ছবিটি সেনাবাহিনী কর্তৃক পাহাড়িদের বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার ছবি।

এই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি পাহাড়িদের বাড়িঘরে সেনাসদস্যদের অগ্নিসংযোগের নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি ২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বরে মিয়ানমারের সেনাদের বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে রাখাইন অঙ্গরাজ্যের মংডুর ওয়াপেইক গ্রামে আগুন নেভানোর ছবি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি নিয়ে রিভার্স সার্চে সৌদি আরব ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘আরব নিউজ’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালের ১৮ নভেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে একটি ছবিরও সংযুক্তি পাওয়া যায়, যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির মিল পাওয়া যায়।

ছবিটির বর্ণনা অংশে বলা হয়, ‘মিয়ানমারের সেনারা ১৩ নভেম্বর (২০১৬) বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে রাখাইন অঙ্গরাজ্যের মংডুর ওয়াপেইক গ্রামে আগুন নেভায়, যেখানে হামলাকারীরা কথিতভাবে ৮০টি বাড়িতে আগুন লাগিয়েছিল।’ (অনূদিত)
এছাড়াও, অনুসন্ধানে ছবিটির সংযুক্তি ‘বিবিসি নিউজ ইন্দোনেশিয়া’র ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে পাওয়া যায়। ছবিটির বর্ণনায় বলা হয়, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী এমন কিছু ছবি প্রকাশ করেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে সৈন্যরা একটি রোহিঙ্গা গ্রামে জ্বলতে থাকা বাড়ির আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে।’ (অনূদিত)
এছাড়াও, ছবিটির সংযুক্তি দেশিয় মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘ঢাকা ট্রিবিউন’ এর ওয়েবসাইটেও ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে পাওয়া যায়। ছবিটির বর্ণনায় বলা হয়, ‘এই হ্যান্ডআউট ছবিটি ২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বর মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রকাশ করেছে। এতে জানানো হয় যে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে রাখাইন অঙ্গরাজ্যের মংডুর ওয়াপেইক গ্রামে সেনারা আগুন নেভাচ্ছে। হামলাকারীরা কথিতভাবে সেখানে ৮০টি বাড়িতে আগুন লাগিয়েছিল।’ (অনূদিত)
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের বা বাংলাদেশের নয় এবং এতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বা পাহাড়ের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
সুতরাং, পাহাড়িদের বাড়িঘরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অগ্নিসংযোগের ছবি দাবিতে ২০১৬ সালে মিয়ানমারের সেনাদের বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে রাখাইন অঙ্গরাজ্যের মংডুর ওয়াপেইক গ্রামে আগুন নেভানোর ছবি প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Arab News – 30,000 displaced by violence in Myanmar’s Rakhine: UN
- BBC News Indonesia – HRW satellite photos show the destruction of Rohingya homes in Myanmar
- Dhaka Tribune – Myanmar detains police over Rohingya abuse video