ছাত্রলীগের মিছিলে ওসি কর্তৃক সহকর্মীকে চড় মারার দৃশ্য দাবিতে ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, “রাজধানীতে ছাত্রলীগের মিছিল থেকে কাউকে ধরতে না পারায় এস আই কে চড় মারলেন ওসি,,এই জামায়াতের এজেন্ট রাজাকার ওসি-কে চিনে রাখুন,, ভবিষ্যতে বাংলার মাটিতে এই রাজাকারের বিচার হবে!” দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় ছাত্রলীগের মিছিলে কাউকে গ্রেফতার করতে না পারায় ওসি কর্তৃক সহকর্মীকে চড় মারার দৃশ্য নয় বরং, এটি ২০২০ সালে বরগুনার বামনা থানায় মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদের সহযোগী শাহেদুল ইসলাম সিফাতের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন চলাকালে তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কর্তৃক তৎকালীন সহকারী উপপরিদর্শকে (এএসআইকে) চড় মারার ভিডিও। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘৭৩ নং ওয়ার্ড সেচ্ছাসেবক দল ツ’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২০ সালের ৯ আগস্ট প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। 

Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়, এটি শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ না করার কারণে বরগুনার বামনা থানার ওসি ইলিয়াস আলী তালুকদার একই থানার এএসআই পদমর্যাদার এক পুলিশ সদস্যকে অনেক মানুষের সামনে প্রকাশ্যে থাপ্পড় দেওয়ার ভিডিও।

এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে ডেইলি স্টারের ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ১১ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ৮ আগস্ট কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের মৃত্যুর পর গ্রেপ্তার ও কারাবন্দী শাহেদুল ইসলাম সিফাতের মুক্তির দাবিতে বামনা কলেজ রোডে সিফাতের সহপাঠী ও এলাকাবাসী আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচি পণ্ড করার সময় কর্তব্যরত এএসআইকে চড় মারেন বরগুনার বামনা থানার তৎকালীন ওসি ইলিয়াছ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ ঘটনায় তদন্তের জন্য ৯ আগস্ট বরগুনা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন ৩-সদস্যের একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটির সুপারিশে তাকে বামনা থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল বলে জানান বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও এ ঘটনায় গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান মো. মফিজুল ইসলাম।

সেসময় এ বিষয়ে অন্যান্য গণমাধ্যমও সংবাদ (,,)  প্রচার করে। 

অর্থাৎ, ভিডিওটি সাম্প্রতিক ঢাকায় ছাত্রলীগের মিছিলে কাউকে গ্রেফতার করতে না পারায় ওসি কর্তৃক সহকর্মীকে চড় মারার ঘটনার নয়। 

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় তার দুই সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং শিপ্রা দেবনাথকে গ্রেফতার করে পুলিশ। 

এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় ছাত্রলীগের মিছিলে কাউকে গ্রেফতার করতে না পারায় ওসি কর্তৃক সহকর্মীকে চড় মারার কোনো তথ্য বিশ্বাসযোগ্য সূত্র বা গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, ২০২০ সালে বরগুনার বামনা থানায় মেজর সিনহা হত্যা মামলায় তার সহযোগী সিফাতের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন চলাকালে তৎকালীন ওসি কর্তৃক কর্তব্যরত এএসআইকে চড় মারার ভিডিওকে সাম্প্রতিক ঢাকায় ছাত্রলীগের মিছিলে কাউকে গ্রেফতার করতে না পারায় ওসি কর্তৃক সহকর্মীকে চড় মারার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img