সম্প্রতি অনলাইনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বক্তব্য দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে, যেখানে কথিত সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বলতে শোনা যায়, “আপনারা কি আমাকে চান? আমি আসছি আপনাদের মাঝে। খুব শীঘ্রই আসছি।”

এরূপ দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উপরোল্লিখিত ভিডিওটি ১ লক্ষ ২০ হাজারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং ১১ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে লাইক দেওয়া হয়েছে।
এরই প্রেক্ষিতে ফেসবুকেও টেক্সট আকারে সায়মা ওয়াজেদের বক্তব্য দাবিতে আলোচিত কথা প্রচার হতে দেখা যায়। দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘আমি আসছি আপনাদের মাঝে’ শীর্ষক পুতুলের বক্তব্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি একটি ভিডিওকে আসল দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসল হওয়ার সপক্ষে গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। ভিডিওটির সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Mitol Ahmed Sabuj’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১১ সেপ্টেম্বরে ভিডিওটির ভিডিওটির সম্ভাব্য প্রথম প্রচার পাওয়া যায়।

তবে ভিডিওটিতে সায়মা ওয়াজেদের বলা বক্তব্য কবেকার বা কোথাকার এরূপ কোনো প্রেক্ষাপট উল্লেখ করা হয়নি। ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুল, পনেরো দিনের মধ্যেই দেশে আসছে। এমনটাই জানা গেছে। সূত্র: আনোয়ার টিভি’। উল্লেখ্য, ‘আনোয়ার টিভি’ মূলত একটি স্যাটায়ার বা ব্যাঙাত্মক প্ল্যাটফর্ম। অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি মূলত সার্কাজমের উদ্দেশ্যে প্রচার করা হয়েছিল যা পরবর্তীতে আসল দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে।
এছাড়া, প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে সায়মা ওয়াজেদের বক্তব্য, অঙ্গভঙ্গি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থায় খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়।
পরবর্তীতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স সার্চে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ এর ওয়েবসাইটে ‘Ms Saima Wazed takes charge as Regional Director, WHO South-East Asia’ শিরোনামে ২০২৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “মিস সায়মা ওয়াজেদ আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।” (অনূদিত)। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটিতে একটি ছবিরও সংযুক্তি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত সায়মা ওয়াজেদের দৃশ্যের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

এছাড়া, উক্ত দৃশ্যে ব্যকগ্রাউন্ডে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র লোগো দেখা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোনো ইভেন্টে সায়মা ওয়াজেদের আলোচিত দাবির অনুরূপ কোনো বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টিও অস্বাভাবিক। এ থেকে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ভিডিওটি মূলত উক্ত ছবির প্রেক্ষিতে এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে এআই ও ডিপফেক কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ‘ডিপফেক ও মিটার’ এ আলোচিত ভিডিওটি বিশ্লেষণ করলে এটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়। প্ল্যাটফর্মটির ‘AVSRDD’ ডিটেক্টরের বিশ্লেষণমতে ভিডিওটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৯ শতাংশ।
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি মূলত এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ভিন্ন ছবির প্রেক্ষিতে এআই প্রযুক্তির সাহায্যে ‘আমি আসছি আপনাদের মাঝে’ শীর্ষক পুতুলের বক্তব্যের ভিডিও তৈরি করে আসল দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পাদিত।
তথ্যসূত্র
- WHO – Ms Saima Wazed takes charge as Regional Director, WHO South-East Asia
- DeepFake-O-Meter
- Rumor Scanner’s analysis