সম্প্রতি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ‘ভারতীয় বিমানে নারী পুরুষের হা’তাহাতি, থামালেন বিমানবালা’।
উল্লেখ্য, প্রচারিত ভিডিওটিতে একজন নারী ও পুরুষকে মারামারি করতে দেখা যায় এবং পাশে দাঁড়িয়ে বিমানবালাদের তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করতে দেখা যায়। অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে প্রচারিত ভিডিওটি ভারতীয় বিমানে নারী পুরুষের হাতাহাতির আসল ভিডিও।

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত পোস্ট : রাইজিংবিডি (ইউটিউব), রূপালী বাংলাদেশ (ফেসবুক), দৈনিক আজাদী (ফেসবুক), দ্য নিউজ বিডি (ইউটিউব), দ্য ডেইলি মর্নিং ভয়েস (ফেসবুক)
একই দাবিতে গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে।
ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
থ্রেডসে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বিমানে নারী ও পুরুষের মারামারির আসল দৃশ্য নয়৷ প্রকৃতপক্ষে এটি একটি সাজানো ভিডিও, যেখানে ভারতীয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও কমেডিয়ান দীপক কালাল ও রুতু রামটেকে অভিনয় করেছেন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ভারতের নাগপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ফ্লাই হাই ইনস্টিটিউট’ এর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ১৩ সেপ্টেম্বরে আলোচিত মূল ভিডিওটি প্রচার হতে দেখা যায়।

ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘উড়োজাহাজের মাঝপথে এক যাত্রীর অশোভন কটুক্তি ও সহযাত্রীদের অনুপযুক্তভাবে স্পর্শ করার ঘটনায় উত্তেজনা তৈরি হয়। বিষয়টি সহ্য না করতে পেরে এক যাত্রী প্রতিবাদ জানালে ঘটনাটি দ্রুত দুই যাত্রীর মধ্যে শারীরিক সংঘর্ষে রূপ নেয়, যা বিমানের অন্যান্য যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। কেবিন ক্রুরা দ্রুত ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেন, দুই যাত্রীকে আলাদা করে দেন এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন, যাতে ফ্লাইটে সবার নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত থাকে।’ (অনূদিত)
উক্ত ‘ফ্লাই হাই ইনস্টিটিউট’ এর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটির বায়ো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে লেখা দেখা যায়, ‘আমরা অ্যাভিয়েশন, আতিথেয়তা, ভ্রমণ ও পর্যটন বিষয়ে ডিগ্রি, ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্স প্রদান করি, ১০০% প্লেসমেন্ট সহায়তার নিশ্চয়তাসহ’ (অনূদিত)
উক্ত মূল ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে এতে ‘দীপক কালাল’ ও ‘রুতু রামটেকে’ নামের দুইজন ব্যক্তির ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টও ট্যাগ থাকতে দেখা যায় এবং তাদের অ্যাকাউন্টেও আলোচিত ভিডিওটি পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ট্যাগ করা ব্যক্তি দুইজনের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ব্যক্তি দুইজনের তুলনা করলে নিশ্চিত হওয়া যায়, প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ব্যক্তিরা মূলত ‘দীপক কালাল’ ও ‘রুতু রামটেকে’ নামক উক্ত ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের ব্যক্তিদ্বয়।

‘রুতু রামটেকে’র ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করলে বায়োতে ‘কমেডি’ লেখা দেখতে পাওয়া যায় এবং নানাসময়ে তাকে নানা কমেডি বা হাস্যরসাত্মক কনটেন্ট পোস্ট করতে দেখা যায়৷ ‘দীপক কালাল’ এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করলে দীপক কালাল ইউটিউবার, ব্লগার, কনটেন্ট ক্রিয়েটর, কমেডিয়ান বলে জানা যায়।
পরবর্তীতে ‘ফ্লাই হাই ইনস্টিটিউট’ এর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে নানাসময়ে বিমানের ভেতরের নানারকম পরিস্থিতি নিয়ে দীপক কালালসহ আরো একাধিক ব্যক্তির একাধিক ভিডিও প্রচার হতে দেখা যায়।
এছাড়াও, অনুসন্ধানে এ বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টাইমস’ এর ওয়েবসাইটে গত ১৬ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, দীপক কালাল একজন ইন্টারনেট ব্যক্তিত্ব। এছাড়াও ভিডিওটির বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ভিডিওটি আসলে কোনো বাস্তব ঘটনার নয়, বরং কমেডিয়ান রুতু রামটেকেকে নিয়ে তৈরি একটি স্ক্রিপ্টেড কনটেন্ট। এটি মূলত আপলোড করেছিল ফ্লাই হাই ইনস্টিটিউট, নাগপুরভিত্তিক একটি এভিয়েশন ট্রেনিং সেন্টার, যারা বিনোদনমূলক হলেও শিক্ষামূলক ভিডিও তৈরি করার জন্য পরিচিত। প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিতভাবে এমন স্ক্রিপ্টেড ভিডিও প্রকাশ করে, যা বিমানের ভেতরে আচরণবিধি ও নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তৈরি হয়। এই ভিডিওটিও নাটকীয় মনে হলেও, আসলে সম্পূর্ণরূপে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বানানো হয়েছে এবং বিমানে কোনো বাস্তব ঝগড়া বা মারধরের প্রতিফলন নয়।’ (অনূদিত)
এছাড়াও, অনুসন্ধানে দেখা যায় আগেও উক্ত ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দীপক কালালসহ নানা ব্যক্তির এরূপ স্ক্রিপ্টেড কনটেন্ট আসল দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং তার প্রেক্ষিতে সেসময় নানা ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং প্ল্যাটফর্ম ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেসময় ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ‘নিউজচেকার’ ফ্লাই হাই ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রতিষ্ঠানটি স্পষ্ট জানায়, ভিডিওগুলো তাদের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল, যাতে তারা বিমানের ভেতরে এমন পরিস্থিতি সামলাতে শিখতে পারে। অর্থাৎ, ফুটেজটি কোনো বাস্তব ঘটনার প্রতিফলন নয়, বরং প্রশিক্ষণমূলক ভিডিও।
উপরোল্লিখিত তথ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা করলে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষে স্ক্রিপ্টেড বা সাজানো ছিল, কোনো আসল ঘটনার দৃশ্য নয়।
সুতরাং, বিমানে ভারতীয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও কমেডিয়ান দীপক কালাল ও রুতু রামটেকের অভিনীত সাজানো ভিডিওকে বিমানে নারী ও পুরুষের হাতাহাতির আসল দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Fly High Institute – Instagram Post
- India Times – Fact Check: Is the viral video of Deepak Kalal being beaten by a woman on an airplane scripted or real? Here’s what we know
- Newschecker – Passengers Fighting Over Seat 11A? No, Here’s The Truth Behind Viral Video
- The Quint – Scripted Video of Fight Between Deepak Kalal & Passenger on Plane Viral as Real