সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে নেপালে সম্প্রতি তীব্র আন্দোলনের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা–সহিংসতা ও তরুণদের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেন নেপালের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। বিক্ষোভকারীর সরকারের নানা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের আবাসস্থলেও অগ্নিসংযোগ করে। এরই প্রেক্ষিতে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়, ‘সাম্প্রতিক জেন-জিদের নেতৃত্বে নেপালে বিক্ষোভে প্রাণ গেলো নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝালানাথ খানালের স্ত্রী রাজ্যলক্ষী চিত্রকরের। ঝালানাথ খানালের বাসভবনে ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা আগুন দিলে এতে ভেতরে আটকা পড়েন তার স্ত্রী। পরবর্তীতে আগুনে দগ্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়।’

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন: সময় টিভি, চ্যানেল২৪, আরটিভি, যমুনা টিভি (ফেসবুক), একাত্তর টিভি, এনটিভি, চ্যানেল আই, এটিএন নিউজ, বাংলাভিশন, এখন টিভি (ফেসবুক), এশিয়ান টিভি, দ্য ডেইলি স্টার, কালবেলা, সমকাল, কালের কণ্ঠ, যুগান্তর, ইত্তেফাক, ইনকিলাব, দেশ রূপান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন, মানবজমিন, নয়া দিগন্ত, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, যায়যায়দিন, জনকণ্ঠ, বিডিনিউজ২৪, ঢাকা পোস্ট, ঢাকা ট্রিবিউন, রাইজিং বিডি, বাংলানিউজ২৪, ইউএনবি, ঢাকা প্রকাশ, বণিক বার্তা, সারাবাংলা, ডেইলি অবজারভার, রূপালী বাংলাদেশ, বাহান্ন নিউজ, বাংলাদেশ জার্নাল, খবর সংযোগ, খবরের কাগজ, সংবাদ প্রকাশ, সময়ের আলো, বার্তা বাজার, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, নয়া শতাব্দী, সময়ের কণ্ঠস্বর, বিডি টুডে, বাংলাদেশ বুলেটিন, স্বদেশ প্রতিদিন, প্রবাস খবর, জবাবদিহি (ফেসবুক), ভিউজ বাংলাদেশ, ক্যাম্পাস টাইমস, বাংলা এডিশন, নিউজজোনবিডি, দ্য নিউজ২৪, বিবার্তা২৪, এমটিনিউজ২৪, নিউজজি২৪, দূরবীন টিভি (ফেসবুক), বাংলাদেশ পোস্ট, দেশকাল নিউজ, জাগরণ নিউজ (ফেসবুক), সংবাদ লাইভ২৪, দৈনিক ডেসটিনি, খুলনা গেজেট, বৈশাখী নিউজ, মিরর টাইমস বিডি, আইনিউজবিডি, বাংলাবাজার পত্রিকা।
এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে।
এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে।
এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে
এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের এক্স অ্যাকাউন্টে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে
আলোচিত দাবিতে থ্রেডসে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে।
এরূপ দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন : টাইমস অফ ইন্ডিয়া, লাইভ মিন্ট, নিউজ১৮, আজতক, এবিপি লাইভ, এই সময়, নিউজ২৪, ইন্ডিয়া টিভি (ইউটিউব), এএনআই নিউজ (ইউটিউব), রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড (ইউটিউব), ডিডি নিউজ (ইউটিউব), এনডিটিভি এমপি ছত্তিসগড় (ইউটিউব), আনন্দবাজার, দ্য ওয়াল।
উল্লেখ্য, এ বিষয়ে বাংলাদেশী গণমাধ্যমে মূলত ভারতীয় গণমাধ্যমের বরাতে আলোচিত দাবিতে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছিল।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নেপালে আন্দোলনে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী রবি লক্ষ্মী চিত্রকর আগুনে দগ্ধ হলেও তার নিহত হওয়ার খবরটি সঠিক নয়৷ প্রকৃতপক্ষে তার চিকিৎসা চলছে এবং সর্বশেষ খবর অনুযায়ী তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘বিবিসি’ এর ওয়েবসাইটে গত ১০ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘..অশান্তির ঘটনায় আহতদের মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝালানাথ খানালের স্ত্রী, যিনি মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) কাঠমান্ডুতে বিক্ষোভকারীরা তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলে গুরুতরভাবে দগ্ধ হন। কিছু সংবাদমাধ্যমে রবি লক্ষ্মী চিত্রকর মারা গেছেন বলে খবর প্রকাশিত হলেও, তার স্বামী বিবিসি নেপালিকে জানিয়েছেন যে তিনি এখনও রাজধানীর কীর্তিপুর বার্ন হাসপাতালের আইসিইউতে সংকটাপন্ন অবস্থায় জীবিত আছেন।’ (অনূদিত)
পরবর্তী অনুসন্ধানে নেপালভিত্তিক ফ্যাক্টচেকিং প্ল্যাটফর্ম ‘নেপাল ফ্যাক্টচেক’ এর ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝালানাথ খানালের স্ত্রী চিকিৎসাধীন, মৃত্যুর খবরটি ভুয়া।” প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আলোচিত দাবিটি যাচাই করতে ‘নেপাল ফ্যাক্টচেক’ কীর্তিপুর হাসপাতালের পরিচালক ডা. কিরণ নকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করে, যেখানে রবি লক্ষ্মী চিত্রকরের চিকিৎসা চলছে। ১১ সেপ্টেম্বর বিকেলে ফোনে ডা. নকর্মী ‘নেপাল ফ্যাক্টচেক’কে বলেন, “তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন, তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।”’
নেপালভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘সেতোপাতি’র ওয়েবসাইটে গত ১৮ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘সিনিয়র সিপিএন (একীভূত সমাজবাদী) নেতা ঝালানাথ খানালের স্ত্রী রবি লক্ষ্মী চিত্রকর তার বাম হাত হারিয়েছেন। পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, কীর্তিপুরের বার্ন হাসপাতালে আইসিইউতে থাকা চিত্রকর বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সার্জারি করিয়েছেন এবং তার বাম হাত কেটে ফেলা হয়েছে। কনুইয়ের নিচের অংশটি কর্তন করা হয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বরের বিক্ষোভের সময় খানাল ও চিত্রকরের বসতঘরও আগুনে পোড়ানো হয়েছিল। চিত্রকর অগ্নিকাণ্ডে গুরুতর দগ্ধ হন এবং সংকটাপন্ন অবস্থায় আহত ছিলেন। এছাড়াও, এখন তার নিউমোনিয়া হয়েছে। তবে, তার স্বাস্থ্যের অবস্থা বর্তমানে উন্নতির দিকে যাচ্ছে।’ (অনূদিত)
এছাড়াও, নেপালভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘অর্থদাবালি’র ওয়েবসাইটেও গত ১৭ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে চিকিৎসকদের বরাতে বলা হয়, রবি লক্ষ্মী চিত্রকরের স্বাস্থ্যের অবস্থা বর্তমানে উন্নতির দিকে রয়েছে।
এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝালানাথ খানালের স্ত্রী রবি লক্ষ্মী চিত্রকরের মারা যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয়।
উল্লেখ্য, এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীর নাম রাজ্যলক্ষী চিত্রকর বলা হলেও ‘নেপাল ফ্যাক্টচেক’সহ নেপালের একাধিক গণমাধ্যমে তার প্রকৃত নাম ‘রবি লক্ষ্মী চিত্রকর’ বলে উল্লেখ করা হয়।
সুতরাং, নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝালানাথ খানালের স্ত্রী রবি লক্ষ্মী চিত্রকর আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।