সম্প্রতি, কক্সবাজারে মার্কিন সেনাবাহিনীর সামরিক বিমানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। একই ভিডিওটি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে মার্কিন সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারের ধাক্কায় বাংলাদেশ বিমানের একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার দাবিতেও প্রচারিত হতে দেখা যায়।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত একই ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে মার্কিন সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারের ধাক্কায় বাংলাদেশের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার দাবিতে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি মার্কিন সেনাবাহিনীর সামরিক বিমানে অগ্নিকাণ্ড কিংবা তাদের হেলিকপ্টারের ধাক্কায় বাংলাদেশ বিমানের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কোনো ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আয়োজিত অগ্নি নিরাপত্তা মহড়ায় ডামি বিমানের আগুন নেভানোর ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে সিলেটের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম Sylhet TV এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ল বিমান, তারপর আ’গুন; সিলেটে বিমানবন্দরে ডামি বিমানে অগ্নিনিরাপত্তা মহড়া শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত দাবিগুলোতে প্রচারিত ভিডিওর সাথে উক্ত ভিডিওর মিল রয়েছে। ভিডিওগুলোতে একই স্থানে বিধ্বস্ত বিমানটিকে দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও অগ্নিনির্বাপণে নিয়োজিত বাহিনীরও সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। তবে এটিও লক্ষ্য করা যায় যে, উক্ত ভিডিওটি ক্রপ করে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওগুলো তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওর শিরোনামে উল্লেখ করা হয়, এটি চট্টগ্রাম কিংবা কক্সবাজারের ঘটনা নয় বরং, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডামি বিমানে অগ্নিনিরাপত্তা মহড়ার ভিডিও।
প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে একাধিক মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে একই মহড়ার সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এমন ভিডিও দেখুন এখানে এবং এখানে।
এছাড়াও মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে সে সময় এই মহড়া নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি বাস্তব বিমান দুর্ঘটনার দৃশ্য নয়। মূলত অগ্নিনির্বাপণ মহড়ার অংশ হিসেবে কৃত্রিমভাবে একটি দুর্ঘটনার দৃশ্যপট তৈরি করে উড়োজাহাজের মডেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। গত ২৬ জানুয়ারি সিলেটের এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এ অগ্নিনির্বাপণ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। যাতে বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসারসহ সরকারি বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বিধি অনুসারে প্রতি দুই বছর পরপর সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ধরনের অগ্নিনির্বাপণ মহড়ার আয়োজন করতে হয় বলেও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়।
সুতরাং, কক্সবাজারে মার্কিন সেনাবাহিনীর সামরিক বিমানে অগ্নিকাণ্ড কিংবা তাদের হেলিকপ্টারের ধাক্কায় বাংলাদেশ বিমানের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Sylhet TV Youtube Channel: রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ল বিমান, তারপর আ’গুন; সিলেটে বিমানবন্দরে ডামি বিমানে অগ্নিনিরাপত্তা মহড়া
- Jamuna TV Youtube Channel: 🛑 LIVE : রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ল বিমান, তারপর আগুন; সিলেটে ডামি বিমানে অগ্নিনিরাপত্তা মহড়া
- EKHON TV Youtube Channel: LIVE: সিলেটে ওসমানী বিমানবন্দরে চলছে অগ্নি নির্বাপণ মহড়া | Fire Drill | Osmani International Airport
- Prothom Alo Website: ওসমানী বিমানবন্দরে অগ্নিনির্বাপণ মহড়ায় বেবিচক চেয়ারম্যান | প্রথম আলো
- Rumor Scanner’s Analysis