ঢাবির মুহসীন হলে বিতরণকৃত খাটগুলো ভিপি, হল সংসদ কিংবা শিবির দেয়নি, এগুলোর অর্থায়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। যাতে ভিপি, জিএস ও এজিএস এবং ১২টি সম্পাদক পদের মধ্যে ৯টিতে ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের’ প্রার্থীরা জয় লাভ করে। এদিকে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলেও ভিপি পদে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী ছাদিক হোসেন এবং জিএস পদে রাফিদ হাসান সাফওয়ান জয় লাভ করেন। সম্প্রতি, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ভিপি ছাদিক হোসেন শিক্ষার্থীদের জন্যে ১০০ খাটের ব্যবস্থা করেছেন দাবিতে দেশিয় গণমাধ্যমগুলোতে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এছাড়াও কিছু গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা খাটগুলো হল সংসদ থেকে ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

উল্লিখিত প্রতিবেদনগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে অনেকে দাবি করছেন, শিবির দায়িত্ব পেয়ে শিক্ষার্থীর জন্যে ১০০ খাটের ব্যবস্থা করেছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন ইত্তেফাক, যুগান্তর, ডেইলি সান, ঢাকা পোস্ট, জাগোনিউজ২৪আমার দেশ এবং ক্যাম্পাস টাইমস। 

গণমাধ্যমগুলোর ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

ফেসবুকে প্রচারিত অন্যান্য পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণকৃত ১০০ খাটের ব্যবস্থা ভিপি ছাদিক হোসেন, হল সংসদ কিংবা ছাত্রশিবির করেনি। প্রকৃতপক্ষে, খাটগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ডাকসু নির্বাচনের আগেই কেনা হয়েছিল। ডাকসু নির্বাচনের কারণে সেসময় সেগুলো বণ্টন করা হয়নি। তাই নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সেগুলো নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সহায়তায় বিতরণ করা হয়। 

আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক ফেসবুক পেজ DU News এ গত ১৬ সেপ্টেম্বর একই বিষয় নিয়ে করা একটি পোস্টের সন্ধান পাওয়া যায়।

Screenshot: Facebook 

পোস্টে বলা হয়, গণমাধ্যমে মুহসীন হলের ভিপি ছাদিক হোসেন একদিনে শিক্ষার্থীদের জন্যে ১০০ খাট ব্যবস্থা ও বিতরণ করার বিষয়ে যে সংবাদটি প্রচার করা হয়েছে সেটি সঠিক নয়। পোস্টে হল প্রাধ্যক্ষ ড. মো. সিরাজুল ইসলামের বরাতে উক্ত তথ্যটি নিশ্চিত করে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগেই খাটগুলো ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেদিন শুধুমাত্র নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এগুলো বিতরণ করেন। তিনি আরও জানান, এটি নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। ছাদিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  

তবে ছাদিকের ফেসবুকে ঘটনাটির সত্যতা প্রকাশ করে কোনো পোস্ট করা হয়নি বলেও পোস্টে বলা হয়। এছাড়াও পোস্টে উল্লেখ করা হয় হলের একজন শিক্ষার্থী, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনেক আগে থেকেই এই খাটগুলো ক্রয় করেছে। নির্বাচন শেষে এগুলো শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করার কথা ছিলো। হল সংসদের কোনো প্রতিনিধি বা ভিপির এখতিয়ার নেই এসব খাট বরাদ্দ দেওয়ার।’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন। 

পরবর্তীতে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্যে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মো. সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, নির্বাচনের কয়েকদিন আগে খাট কেনা হয়। এগুলোর অর্থায়ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করা হয়েছে। নির্বাচনের কারণে খাটগুলো বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। সেসময় কাউকে বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হলে সেটি নির্বাচনি প্রচারণার অংশ হয়ে যেত। তাই নির্বাচন পরবর্তী সময়ে খাটগুলো বিতরণের জন্যে হলে একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভিপিকে বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে ১০০ খাট কেনা হয়েছে তবে পরে আরও কেনা হবে। শুধু এই হলেই নয় বেশকিছু হলে এমন খাট বিতরণ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

অর্থাৎ, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণকৃত খাটগুলো ছাত্রশিবির, হল সংসদ কিংবা হলের নব-নির্বাচিত ভিপি ছাদিক হোসেন ব্যবস্থা করেননি। 

সুতরাং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রশিবির, হল সংসদ কিংবা হলের নব-নির্বাচিত ভিপি ছাদিক হোসেন কর্তৃক খাটের ব্যবস্থা করার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • DU News Facebook Page Post
  • Statement of Dr. Md. Serajul Islam, Provost, Haji Muhammad Mohsin Hall, University of Dhaka

আরও পড়ুন

spot_img