গত ১১ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে অনিয়ম, ভোট কারচুপি ও প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে ওইদিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ভোট শেষ হওয়ার দেড় ঘণ্টা আগে নির্বাচন বর্জন করে ছাত্রদল। জাকসু নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্র শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের মাজহারুল ইসলাম জয়ী হয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি অনলাইনে কথিত একটি সংবাদ ভিডিও প্রচার করে থাম্বনেল ও ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, ‘জাকসু নির্বাচনে ভোট জালের অভিযোগে ছাত্রদল ও শিবিরের ত্রিমুখী সংঘর্ষে শিবির প্রার্থী মাজহারুলসহ আহত শতাধিক।’
এছাড়াও, কথিত সংবাদ ভিডিওটিতে সংঘর্ষের দৃশ্য দাবিতে একটি দৃশ্যসহ মাজহারুল ইসলাম ও জাকসু ছাত্রদল প্যানেলের সদস্যের বক্তব্যও সংযুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে।

এরূপ দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাকসু নির্বাচনে ভোট জালের অভিযোগে ছাত্রদল ও শিবিরের ত্রিমুখী সংঘর্ষে শিবির প্রার্থী মাজহারুলসহ শতাধিক আহত হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে জাকসু নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করলেও এরূপ কোনো ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া, কথিত সংবাদের ভিডিওটিতে সম্প্রতি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও শিবিরের সংঘর্ষের সংবাদ ফুটেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২২ সালে হওয়া ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের সংঘর্ষের ফুটেজ সংযুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে ভিডিওর শুরুতে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের ভিডিও দাবিতে একটি ভিডিওর সংযুক্তি পাওয়া যায়। ভিডিওটির প্রেক্ষাপট যাচাইয়ে একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম ‘বাংলাভিশন’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আবারো ছাত্রলীগ-ছাত্রদল সংঘর্ষ’ শিরোনামে ২০২২ সালের ২৬ মে তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে সংযুক্ত ভিডিও ফুটেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সংঘর্ষের ভিডিওটির তুলনা করলে মিল পাওয়া যায়।

ভিডিওটির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বাংলাভিশনের সংবাদে বলা হয়, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আবারও ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুপুর ১২ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় দুপক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।…”
এছাড়াও, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে একজন সংবাদ উপস্থাপিকাকে বলতে শোনা যায়, “ছাত্রদল ও শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৫জন আহত হয়েছেন”। উক্ত সংবাদটির প্রেক্ষাপটের বিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম ‘যমুনা টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে ‘বরিশালে ছাত্রদল ও শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ১৫’ শিরোনামে গত ১১ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বরিশালের মুলাদী সরকারি কলেজে ছাত্রদল ও শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।” উক্ত সংবাদ ফুটেজটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে সংযুক্ত সংবাদ উপস্থাপিকা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও ভয়েসের মিল পাওয়া যায়। এ থেকে স্পষ্ট যে মূলত যমুনা টিভির উক্ত সংবাদ ফুটেজটি থেকে উক্ত উপস্থাপিকার বলা সংবাদের ‘‘বরিশালের মুলাদী সরকারি কলেজে’ শব্দগুচ্ছ বাদ দিয়ে ‘ছাত্রদল ও শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন” শব্দগুচ্ছ নিয়ে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত কথিত সংবাদে সংযুক্ত করা হয়েছে।

পরবর্তীতে বরিশালের মুলাদী সরকারি কলেজে ছাত্রদল ও শিবিরের সংঘর্ষের বিষয়ে অনুসন্ধান করলে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র সূত্রে জানা যায়, “আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বরিশালের মুলাদী সরকারি কলেজে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে দুই পক্ষের নেতারা দাবি করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে।”
অর্থাৎ, প্রচারিত উপরোল্লিখিত কোনো ফুটেজের সাথেই ‘জাকসু নির্বাচনে ভোট জালের অভিযোগে ছাত্রদল ও শিবিরের সংঘর্ষ’ এর দাবির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এছাড়াও, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত কথিত সংবাদ প্রতিবেদনে জাকসুতে শিবিরের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম ও ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখীর বক্তব্যের সংযুক্তি পাওয়া যায়। তবে কোনোটির সাথেই ‘জাকসু নির্বাচনে ভোট জালের অভিযোগে ছাত্রদল ও শিবিরের সংঘর্ষ’ দাবির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ বা সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, জাকসু নির্বাচন ঘিরে ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের মধ্যে এরূপ কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে গণমাধ্যমে ঢালাওভাবে খবর প্রচার হতো। তবে এ বিষয়ে দেশিয় মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, জাকসু নির্বাচনে ভোট জালের অভিযোগে ছাত্রদল ও শিবিরের ত্রিমুখী সংঘর্ষে শিবির প্রার্থী মাজহারুলসহ শতাধিক আহত হওয়ার দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- BanglaVision – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আবারো ছাত্রলীগ-ছাত্রদল সংঘর্ষ
- Jamuna TV – বরিশালে ছাত্রদল ও শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ১৫ | Barisal Chatrodol-Shibir Clash | Jamuna TV
- Prothom Alo – বরিশালে ছাত্রদল ও শিবির নেতা–কর্মীদের মারামারি, ছয়জনকে হাসপাতালে ভর্তি
- Rumor Scanner’s analysis