গত ০৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে, “ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ছাত্রদল ও শিবিরের মুখোমুখি সংঘর্ষ” দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের মধ্যে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, ২০২২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের সংঘর্ষসহ বিভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিও যাচাই ১
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ২৭ মে “ঢাকায় ফের সংঘর্ষে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল” শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

ভিডিওটির বর্ণনা থেকে জানা যায়, এক দিনের ব্যবধানে সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুনরায় সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে জার্মান ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা সংস্করণের ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ২৬ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৬ মে একদিন বিরতি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে। শুধু ক্যাম্পাসে নয় সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় ঢুকেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেলেও ছাত্রলীগ এই অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রদলের ওপরই দায় চাপায়।
অর্থাৎ, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
ভিডিও যাচাই ২
ভিডিওর পরবর্তী অংশে থাকা ফুটেজটির রিভার্স সার্চ করে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম স্টার নিউজের ফেসবুক পেজে গত ২ সেপ্টেম্বর “ছাত্রলীগের বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে আনছে ছাত্রদল: এস এম ফরহাদ” শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত অংশের ভিডিওর প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে জানা যায়, শিবিরের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ ছাত্রদলের বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন এক সংবাদ সম্মেলনে।
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত হয় শিবিরের এই সংবাদ সম্মেলন।
অর্থাৎ, এই ভিডিওটির সাথে ছাত্রদল-শিবির সংঘর্ষ দাবির সম্পর্ক নেই।
ভিডিও যাচাই ৩
ভিডিও একটি অংশে থাকা ফুটেজের রিভার্স সার্চ করে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এখন টিভির ফেসবুক পেজে গত ২ সেপ্টেম্বর “এখন>>> ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল” শিরোনামে প্রচারিত একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর ১৩ মিনিট ১৮ সেকেন্ড অংশে সাথে আলোচিত অংশের ভিডিওর মিল রয়েছে।

এটিও উপরোক্ত সংবাদ সম্মেলনেরই ভিডিও, যার সাথে ছাত্রদল-শিবির সংঘর্ষ দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।
ভিডিও যাচাই ৪
ভিডিওর আরেকটি অংশে থাকা ফুটেজের রিভার্স সার্চ করে ‘BN MEDIA’ নামে একটি ফেসবুক পেজে গত ২ সেপ্টেম্বর প্রচারিত ভিন্ন ফ্রেমের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত অংশের ভিডিওর মিল রয়েছে।

এই ভিডিওটির বর্ণনা অনুয়ায়ী, ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত হবার পর ছাত্রদলের আবিদের বক্তব্যের ভিডিও এটি।
অর্থাৎ, এই ভিডিওটির সাথেও ছাত্রদল-শিবির সংঘর্ষ দাবির সম্পর্ক নেই।
ভিডিও যাচাই ৫
ভিডিওর আরেকটি অংশে থাকা ফুটেজের রিভার্স সার্চ করে প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেলে গত ২ সেপ্টেম্বর প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত অংশের ভিডিওর মিল রয়েছে।

এই ভিডিওটির বর্ণনা অনুয়ায়ী, নারী শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের হুমকির প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভের ভিডিও এটি।
ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে গত ২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নারী শিক্ষার্থী বিএম ফাহমিদা আলমকে প্রকাশ্যে গণধর্ষণের হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ঢাবি শাখা ছাত্রদল। দুপুর ১২টায় ঢাবির পায়রা চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
ভিডিও যাচাই ৬
ভিডিও আরেকটি অংশে থাকা ফুটেজের কিছু কী ফ্রেম রিভার্স সার্চ করে জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের ইউটিউব চ্যানেলে গত ২ সেপ্টেম্বর “’শিবির নেতা কর্তৃক গ ণধ র্ষ ণের হুমকি’র প্রতিবাদ ছাত্রদল নেত্রীদের’” শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর ১ মিনিট ২৪ সেকেন্ড অংশ থেকে ৫ মিনিট ১৫ সেকেন্ড অংশে থাকা দুজন নারীর বক্তব্যের দৃশ্যের মিল রয়েছে।


ভিডিও যাচাই ৭
ভিডিও আরেকটি অংশে থাকা ফুটেজের রিভার্স সার্চ করে জাতীয় দৈনিক ইনকিলাবের ফেসবুক পেজে গত ২ সেপ্টেম্বর “যে আলী হোসেন কে শিবিরের বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সে ছাত্রদলের সাথে সম্পৃক্তঃ সাদিক কায়েম” শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত অংশের ভিডিওর মিল রয়েছে।

ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে জানা যায়, শিবিরের প্রার্থী সাদিক কায়েম ছাত্রদলের বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন তার এক বক্তৃতায়।
এছাড়াও আলোচিত ভিডিওটিতে বেশ কিছু অপ্রাসঙ্গিক ফুটেজ যুক্ত করা হয়েছে।
ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিবির ও ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে এ বিষয়ে গণমাধ্যমগুলো ঢালাওভাবে সংবাদ প্রচার করতো। তবে এ বিষয়ে গণমাধ্যম কিংবা বিশ্বস্ত সূত্রে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ২০২২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের সংঘর্ষসহ বিভিন্ন ঘটনার একাধিক ভিডিওকে ডাকসুর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ও শিবিরের সংঘর্ষ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- bdnews24 – ঢাকায় ফের সংঘর্ষে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল
- DW – ক্যাম্পাসে আধিপত্য ধরে রাখতে মরিয়া ছাত্রলীগ
- Star News – Facebook Post
- Prothom Alo – নিজেদের ধর্ষণ-চাঁদাবাজি ঢাকতে ছাত্রদল ‘দায় চাপানোর রাজনীতি’ করছে: শিবির নেতা ফরহাদ
- Ekhon TV – Facebook Live
- Dhaka Post – এক ছবির জন্য শিবির বলছে, অথচ ছাত্রদল নিয়ে ১০টির বেশি পোস্ট রয়েছে: সাদিক
- BN MEDIA – Facebook Post
- Prothom Alo – নারী শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের হুমকির প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ
- Dhaka Post – নারী শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের হুমকির প্রতিবাদে ঢাবি ছাত্রদলের বিক্ষোভ
- Bangladesh Pratidin – ‘শিবির নেতা কর্তৃক গ ণধ র্ষ ণের হুমকি’র প্রতিবাদ ছাত্রদল নেত্রীদের’
- Inqilab Digital – Facebook Post