গত ১১ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের এর প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ‘এই মুহূর্তে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি | শিবির – ছাত্রদল মুখোমুখি অবস্থানে | ভিতরে পুলিশের ব্যপক অভিযান চলছে’।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি জাকসু নির্বাচনকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সংঘর্ষের দৃশ্যের নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের গুলি ছোঁড়ার ভিডিও।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটির কয়েকটি কী-ফ্রেম রিভার্স সার্চের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।

ভিডিওটির শিরোনামে দাবি করা হয়, এটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি সহায়তায় ছাত্রলীগের হামলার দাবি করে পোস্টটিতে বলা হয়, ‘হামলার এক পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায় তখনই পুলিশ এসে অতর্কিত ভাবে গুলিবর্ষণ শুরু করে।’
পরবর্তীতে দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম ‘ঢাকা পোস্ট’ এর ওয়েবসাইটে একইদিন অর্থাৎ, গত বছরের ১৬ জুলাইয়ে ‘জাবিতে গভীর রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, পুলিশের গুলি’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সেদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দিবাগত রাত ১ টা ৫০ মিনিটের দিকে বহিরাগতসহ ছাত্রলীগের প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মী হামলা চালায়। এসময় হামলা থেকে বাচতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনর ভেতর আশ্রয় নিলে সেখানেও তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, পরবর্তীতে হল থেকে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী বের হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়। তবে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের ছোড়া গুলিতে চারজন সাংবাদিকসহ ছয়জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন বলেও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়।
পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ফেসবুক পেজ JU Insiders পর্যালোচনা করে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই মধ্যরাতে পুলিশের গুলি করার বিষয়ে পেজটিতে করা একাধিক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে। এছাড়াও মূলধারার গণমাধ্যম ডেইলি স্টারের ফেসবুক পেজে সেরাতে পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনও পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, পূর্বেও একই ভিডিওকে গত মে মাসে যাত্রাবাড়ী এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলি ছোঁড়ার ভিডিও দাবিতে ও গত জুলাই মাসে সেনা সদরে আওয়ামী পন্থী সেনা সদস্যদের বিদ্রোহ দাবিতে প্রচার করা হলে সেসময় এ নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, জাকসু নির্বাচনকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির ও ছাত্রদলের মুখোমুখি অবস্থান দাবিতে গত বছর জুলাইয়ের আন্দোলন চলাকালে জাবিতে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের গুলি ছোঁড়ার ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Bangladesh Nationalist Party-BNP – Facebook Post
- Dhaka Post Website: জাবিতে গভীর রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, পুলিশের গুলি
- JU Insiders Facebook Page Post
- JU Insiders Facebook Page Post
- The Daily Star: জাবিতে মধ্যরাতে ছাত্রলীগ-পুলিশের হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত, শিক্ষক ও ৪ সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ