সম্প্রতি, একজন নারীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করার পর হত্যা করে বস্তায় ভরে রাস্তায় ফেলে গেছে জুলাই জঙ্গী মব সন্ত্রাসীরা- শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত বস্তাবন্দী লাশের ভিডিওটি কোনো নারীর নয় এবং এই লাশের সাথে ধর্ষণেরও কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, এটি গত জুন মাসে নারায়নগঞ্জে এক যুবকের বস্তাবন্দী লাশ করে নালা থেকে উদ্ধারের ঘটনার দৃশ্য।
অনুসন্ধানে ‘Jabed Ahmed Jabed Ahmed’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১৭ জুন প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটিতে থাকা লাশ এবং লাশের পাশে থাকা মানুষের সঙ্গে আলোচিত ভিডিওতে লাশ ও লাশের পাশে থাকা মানুষের পোশাক এবং চেহারার মিল রয়েছে।

জাবেদ আহমেদের পোস্টের ক্যাপশনের দাবি অনুযায়ী এটি গত ১৭ জুন ফতুল্লা পূর্ব শিয়াচর লালখা এডভান্স গার্মেন্টসের সামনে নতুন রাস্তা নামে পরিচিত এলাকার রাস্তার পাশের ড্রেন থেকে বস্তাভর্তি লাশ উদ্ধারের দৃশ্য।
উক্ত সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক যায়যায়দিনের ওয়েবসাইটে “ফতুল্লায় ড্রেন থেকে যুবকের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার”- শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ১৭ জুন সকাল সাড়ে ১১ টায় ফতুল্লার পূর্ব শিহাচর লালখাঁ এলাকায় রাস্তার পাশের ড্রেন থেকে জনি সরকার (২৫) নামে এক যুবকের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত জনি সরকার সিলেট জেলার জামালগঞ্জ থানার বিশ্নপুর গ্রামের করুনা সরকারের ছেলে। সে তার পরিবারের সঙ্গে ফতুল্লার লালখাঁ এলাকায় বসবাস করতো।
ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, প্লাষ্টিকের বস্তায় হাত পা বাধা অবস্থায় ড্রেন থেকে জনি সরকারের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
পরবর্তীতে গত ১৯ জুন প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে “অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মাদকাসক্ত ছেলেকে হত্যা করেন মা–বাবা: পুলিশ”- শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে আলোচিত ঘটনার বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়।
গত ১৯ জুন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) মো. হাসিনুজ্জামান বলেছেন, পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে ছেলে হত্যায় বাবা করুণা সরকারের সম্পৃক্ততা পায়। পরে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে বাবার সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, ছেলে মাদকাসক্ত ছিল। প্রায়ই টাকার জন্য বাড়িঘরে ভাঙচুর করতেন। বাবা-মাকেও মারধর করতেন। দীর্ঘদিন ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাবা ঘুমের মধ্যে মাথায় রুটি তৈরি করার বেলন দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন। মা অসিতা রানী সরকার তাঁর স্বামীকে সহায়তা করেন।
পাশাপাশি, একই তথ্য নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের ফেসবুক পেজ থেকেও প্রচার করা হয়।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওতে থাকা বস্তাবন্দী লাশটি জনি সরকার নামক এক যুবকের।
সুতরাং, গত জুন মাসে নারায়নগঞ্জে এক যুবকের বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধারের দৃশ্যকে সম্প্রতি এক নারীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণের হত্যা করে রাস্তায় ফেলে যাওয়ার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Jabed Ahmed Jabed Ahmed- Facebook Post
- Jaijaidin- ফতুল্লায় ড্রেন থেকে যুবকের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার
- Prothom Alo- অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মাদকাসক্ত ছেলেকে হত্যা করেন মা–বাবা: পুলিশ
- Narayanganj DistricPolice- Facebook Post