চট্টগ্রামে স্কুল ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ ও হত্যার দাবিটি ভুয়া

সম্প্রতি, চট্টগ্রামের লোহাগড়ায় এক স্কুল ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ ও পরবর্তীতে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে দাবিতে একটি মেয়ের নিথর দেহের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের লোহাগড়ায় বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে স্কুল ছাত্রীকে গণধর্ষণ ও হত্যার মতো কোনে ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সিঙ্গুর শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিক থেকে নার্সের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতেপ্রচার করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানে আলোচিত ভিডিওর কয়েকটি কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Sovanlal Sahoo এবং Rajkumar Karak Prince নামের দুটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ১৫ আগস্ট একই ভিডিও প্রচারিত হতে দেখা যায়। ভিডিওগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে। পোস্ট দুটিতে দাবি করা হয়, ভিডিওতে দেখতে পাওয়া লাশটি দিপালী জানা নামের এক মেয়ের। পোস্টটির আগের দিন রাতে অর্থাৎ, ১৪ আগস্ট রাতে তার কর্মস্থল সিঙ্গুরের শিবম সেবা সদন নামের একটি নার্সিংহোম থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা ও পরবর্তীতে খুন করা হয় বলেও পোস্টটিতে দাবি করা হয়। এছাড়াও পোস্টটিতে উল্লেখ করা হয়, দিপালী মাত্র ৩ দিন আগে তিনি ওই নার্সিংহোমে জয়েন করেন।

Video Comparison by Rumor Scanner 

প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম TV9 Bangla-এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৪ আগস্ট সিঙ্গুরে নার্সিংহোমে পাওয়া গেল নার্সের ঝুলন্ত দেহ! শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদনটি থেকেও পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুর শহরের শিবম সেবা সদন নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিক থেকে দিপালী জানা নামের একজন নার্সের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের তথ্য পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনটিতেও বলা হয়, দিপালী ঘটনার মাত্র ৩ দিন আগে প্রতিষ্ঠানটিতে নার্স হিসেবে জয়েন করেন। এর মধ্যেই তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়। তবে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করছেন বলেও প্রতিবেদনটিতে বলা হয়। কিন্তু প্রতিবেদনের কোথাও ধর্ষণের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এমন অভিযোগের কথাও প্রতিবেদনটিতে বলা হয়নি। 

Comparison by Rumor Scanner 

এছাড়াও প্রতিবেদনটির শুরুতে লাশ উদ্ধারের একটি সিসিটিভি ফুটেজ দেখানো হয়। যাতে লাশটিকে একটি স্ট্রেচারে করে আনতে দেখা যায়। উক্ত ফুটেজে দেখতে পাওয়া লাশের পরনে থাকা জামার রঙ ও প্যাটার্নের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত লাশের ভিডিওতে থাকা মেয়ের পোশাকের মিল লক্ষ্য করা যায়। 

পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে একাধিক ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এঘটনায় প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। প্রতিবেদনগুলোতে দিপালী জানা নামের ওই নার্সের মৃত্যুর ঘটনাকে রহস্যজনক বলে অভিহিত করা হলেও তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এমন দাবি করতে দেখা যায়নি। 

এছাড়াও কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের লোহাগড়ায় কোনো স্কুল ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, ভারতের পশ্চিতবঙ্গের এক নার্সের মরদেহের ভিডিওকে চট্টগ্রামের লোহাগড়ায় স্কুল ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে হত্যার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img