জামায়াত নেতার কথায় ফাইলে সই না করায় সরকারি কর্মকর্তাকে মেরে ফেলার দাবিটি ভুয়া 

সম্প্রতি, একজন সরকারি কর্মকর্তা জামায়াত নেতার কথা মতো ফাইলে স্বাক্ষর না করায় তাঁকে (সরকারি কর্মকর্তাকে) মেরে ফেলা হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, দুজন ব্যক্তি একটি নগ্ন মানবদেহ টেনেহিঁচড়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে তুলছেন।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সিঁড়ি দিয়ে টেনে এক ব্যক্তির দেহ উপরে নিয়ে যাওয়ার ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো ঘটনা নয়। এর সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীরও কোনো সম্পর্ক নেই। বরং, ভিডিওটি ভারতের বিহার রাজ্যের একটি সরকারি হাসপাতালের। হাসপাতালটিতে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে আসা মৃতদেহ স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়ার বদলে হাসপাতালের কর্মীরা দেহটি সিঁড়ি দিয়ে টেনে ময়নাতদন্তের কক্ষে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার ভিডিও এটি। 

এই বিষয়ে ভারতীয় অনলাইন সংবাদ প্লাটফর্ম ‘BIO Saga’ এক্স অ্যাকাউন্টে ‘A dead body is being dragged up the stairs and humanity is being strangled.’ ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি ভারতের বিহার রাজ্যের বেতিয়া শহরের সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (GMCH) -এর ঘটনা। তবে, ভিডিওটিতে ঘটনার বিস্তারিত কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।

পরবর্তীতে, প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এর ওয়েবসাইটে গত ১৩ আগস্ট ‘Body Brought For Post-Mortem Dragged At Bihar Hospital, Sparks Outrage’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, দু’টি পা ধরে সিঁড়ি দিয়ে এক ব্যক্তির দেহ উপরে টেনে নিয়ে যাওয়ার এই ঘটনাটি ভারতের বেতিয়া শহরের সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (GMCH) -এর। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে আনা হয়েছিল। স্ট্রেচার ব্যবহার না করে দেহটি সিঁড়ি দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় মর্গের এক কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়।

এ বিষয়ে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ‘News9 Live’ -এর ওয়েবসাইটে গত ১২ আগস্ট ‘Video of Bihar hospital staff dragging body to post-mortem room sparks outrage’ শিরোনোমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের বেতিয়া শহরে সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (GMCH) স্ট্রেচার ব্যবহার না করে হাসপাতালের কর্মীরা দেহটি সিঁড়ি দিয়ে টেনে ময়নাতদন্তের কক্ষে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পালাম শহরের বেতিয়া নৌতান রোড থেকে উদ্ধার হওয়া দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল বলে প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়। 

এছাড়াও, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘Navbharat Times’ এবং ‘The Free Press Journal’ এ এই বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও ঘটনাটি ভারতের বিহার রাজ্যের বেতিয়া শহরের সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (GMCH) -এর বলে জানা যায়।

সুতরাং, ভারতের বিহার রাজ্যের ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে বাংলাদেশে জামায়াত নেতার কথায় ফাইলে সই না করায় সরকারি কর্মকর্তাকে মেরে ফেলা হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img