রাশিয়ায় ভূমিকম্পের দৃশ্য দাবিতে মায়ানমারের ভিডিও প্রচার

রাশিয়ার পূর্ব উপকূলীয় এলাকায় ৮ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। স্থানীয় সময় আজ (৩০ জুলাই) সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে এ ভূকম্পন অনুভূত হয় বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)। এরই প্রেক্ষিতে গণমাধ্যমে একটি ভিডিও ফুটেজ প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ভিডিওটি রাশিয়ায় হওয়া ভূমিকম্পের দৃশ্য। ফুটেজটিতে দেখা যায় ভূমিকম্পে একটি দোকানের শেলফ বা তাক ভেঙে পড়ছে।

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত পোস্ট দেখুন : আরটিভি (ফেসবুক), এখন টিভি (ইউটিউব), দীপ্ত টিভি (ফেসবুক), এটিএন বাংলা (ইউটিউব), যুগান্তর (ফেসবুক), দৈনিক আজাদী (ফেসবুক), খবর সংযোগ (ফেসবুক)।

এছাড়া, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত নেটিজেনের ইনস্টাগ্রাম পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।


এছাড়াও, ভারতীয় গণমাধ্যমেও আলোচিত দাবিতে ভিডিওটি প্রচার হতে দেখা যায়। দেখুন: এনডিটিভি

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি আজ (৩০ জুলাই) রাশিয়ার পূর্ব উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানা ভূমিকম্পের দৃশ্যের নয় বরং, গত ২৮ মার্চে মায়ানমারে আঘাত হানা ভূমিকম্পের দৃশ্য আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধান আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ডেইলি মেইল’ এর এক্স অ্যাকাউন্টে গত ০১ এপ্রিলে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে মিল পাওয়া যায়। ভিডিওটির সম্পর্কে এক্স পোস্টটিতে বলা হয়, “ভূমিকম্পে মিয়ানমারের দোকানে তাক ভেঙে পড়লো।” (অনূদিত)

এছাড়াও, ‘নেক্সটা’ নামক একটি পূর্ব ইউরোপীয়ান গণমাধ্যমের এক্স অ্যাকাউন্টেও আলোচিত ভিডিওটি গত ৩০ মার্চে প্রচার হতে দেখা যায়। পোস্টটিতে বলা হয়, “এই মেয়েটি তার কর্মস্থলে ভূমিকম্প থেকে বেঁচে ফিরেছে। মিয়ানমারে ভূমিকম্পের তীব্রতা রিখটার স্কেলে ৭.৭ পৌঁছেছে। এই দুর্ঘটনার পর হতাহতের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৃতের সংখ্যা হাজার হাজার হতে পারে – উদ্ধার অভিযান এখনও চলছে।” (অনূদিত)

অনুসন্ধানে আলবেনিয়ান ভিত্তিক গণমাধ্যম ‘টেলিগ্রাফি’র ওয়েবসাইটেও আলোচিত দৃশ্য মায়ানমারের ভূমিকম্পের দাবিতে পাওয়া যায়।

উপরোল্লিখিত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজের ওয়েবসাইটে “Myanmar earthquake: What we know” শীর্ষক শিরোনামে গত ২৮ মার্চে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “শুক্রবার, ২৮ মার্চ তারিখে আঘাত হানা বিশাল ভূমিকম্পে মিয়ানমার বিপর্যস্ত। ৭.৭ মাত্রার এই কম্পন থাইল্যান্ড এবং দক্ষিণ-পশ্চিম চীন সহ অন্যান্য স্থানেও অনুভূত হয়েছিল।… ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে (USGS) জানিয়েছে যে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল সাগাইং শহরের ১৬ কিলোমিটার (১০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ছিল। এটি মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়েরও কাছাকাছি, যার জনসংখ্যা প্রায় ১.৫ মিলিয়ন – এবং রাজধানী নেপিডো থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার (১২৫ মাইল) উত্তরে।” (অনূদিত)

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের বা রাশিয়ার নয়। প্রকৃতপক্ষে ভিডিওটি গত ২৮ মার্চে মায়ানমারে আঘাত হানা ভূমিকম্পের দৃশ্য।

সুতরাং, গত ২৮ মার্চে মায়ানমারে আঘাত হানা ভূমিকম্পের দৃশ্যকে আজ (৩০ জুলাই) রাশিয়ার পূর্ব উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানা ভূমিকম্পের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img