সম্প্রতি সাতক্ষীরায় স্কুলছাত্রী পূর্ণিমা দাসকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এমন একটি দাবি এবং তার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু পোস্টে ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়েছে। ভারতেও সামাজিক মাধ্যমে এটি প্রচারিত হয়েছে। ভারতীয় পোস্টগুলোতে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা হিসেবে দেখিয়ে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের খারাপ পরিস্থিতি দেখানো হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট এখানে, এখানে এবং এখানে। এক্সে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট এখানে, এখানে এবং এখানে। ঘটনাটির ওপর সাম্প্রতিক সময়ে ও সাম্প্রদায়িক আঙ্গিকে সংবাদ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশি পোর্টাল Hindu News এবং ভারতীয় পোর্টাল Hindu Post.
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাতক্ষীরার পূর্ণিমা দাসের ধর্ষণ ও হত্যা সাম্প্রতিক কোনো ঘটনা নয়; এটি ২০২১ সালের ঘটনা। এছাড়া, এই ঘটনায় কোনো সাম্প্রদায়িক যোগসূত্রও নেই। ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিও হিন্দু সম্প্রদায়ের।
পূর্ণিমা দাসের ধর্ষণ ও হত্যা দাবিতে প্রচারিত ছবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায় এটি ২০২১ সালের ঘটনা। ২০২১ সালের বিভিন্ন প্রতিবেদনে প্রচারিত ছবিটি পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার টিকেট গ্রামের শান্তি রঞ্জন দাসের মেয়ে পূর্ণিমা দাস বাড়ি থেকে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় এবং পরেরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে একই এলাকার তারক মন্ডলের নির্মিত নতুন বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে বিবস্ত্র ও দু’হাত বাঁধা অবস্থায় পূর্ণিমা দাসের মরদেহ পাওয়া যায়। পূর্ণিমা দাস সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গাভা একেএম আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে প্রমিকভাবে ধারণা করা হয়।
একইদিনে পূর্ণিমা দাসের বাবা বাদী হয়ে পার্থ মণ্ডলকে একমাত্র আসামি করে থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, পার্থ মণ্ডল ওই ছাত্রীকে উত্যক্ত করে আসছিলেন। পার্থ ওই ছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে ওই ছাত্রীর পরিবার সেটি প্রত্যাখ্যান করে। ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে পার্থ ওই ছাত্রীর মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে তাকে ডেকে নিয়ে যান। মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।
পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় পার্থকে সদর উপজেলার বৈকারী সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পরে পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে পূর্ণিমাকে হত্যার কথা স্বীকার করে পার্থ।
সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান পরেরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, “দেবহাটা উপজেলার টিকেট গ্রামের শান্তিরঞ্জন দাসের মেয়ে গাভা একেএম আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী পূর্ণিমা দাসকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ শেষে গলায় ক্যাবল পেঁচিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠে তার প্রেমিক একই গ্রামের একই গ্রামের শিবপদ মন্ডলের ছেলে প্যারা মেডিক্যালে অধ্যয়নরত ছাত্র পার্থ মন্ডলের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১) সকালে বাড়ির পাশের একটি পরিত্যক্ত বাড়ির সবজি বাগান থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন রাতে পূর্ণিমার বাবা শান্তি রঞ্জন দাস উপজেলার দেবহাটা থানায় পার্থকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। এ ঘটনায় একমাত্র আসামি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শনিবার রাতে পার্থ মণ্ডলকে সদর উপজেলার বৈকারী সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করে।”
সংবাদ সম্মেলন থেকে আরও জানা যায়, পূর্ণিমা দাসের সঙ্গে পার্থ মণ্ডলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এক বছর আগে পূর্ণিমাকে বিয়ের জন্য পার্থ মন্ডল প্রস্তাব দেয়। এতে উভয় পরিবার, বিশেষ করে পূর্ণিমার বাবা শান্তি রঞ্জন দাস রাজি না হওয়ায় পূর্নিমা তাকে এড়িয়ে চলত। তাকে এড়িয়ে চলা এবং অন্য সম্পর্কে জড়ানোর খবর শুনে পার্থ ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পনা করে সুযোগ বুঝে তাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে।”
অর্থাৎ, সাতক্ষীরার পূর্ণিমা দাসের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাটি ২০২১ সালের এবং এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তি হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
সুতরাং, সাতক্ষীরার পূর্ণিমা দাসের ধর্ষণ ও হত্যার পুরোনো ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রতিক ও সাম্প্রদায়িক ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।