শহিদুল আলম গাজায় পৌঁছেছেন দাবিতে এআই ছবি ভাইরাল

গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে গাজার ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামে একটি নৌবহর যাত্রা শুরু করে। এই মিশনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অ্যাক্টিভিস্ট, সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মীরা অংশ নেন। এর ধারাবাহিকতায়, গত ১ অক্টোবর ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) জাহাজ ‘কনশানস্’ (,,) আন্তর্জাতিক সাংবাদিক এবং চিকিৎসা পেশাদারদের নিয়ে গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। এই জাহাজে বাংলাদেশের আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলমও যোগ দেন। 

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিতে দেখা যায়, ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের সামনে শহিদুল আলমসহ কয়েকজন শিশুদের খাবার ও পানি বিতরণ করছেন। ছবির ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, শহিদুল আলম গাজায় পৌঁছেছেন।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শহিদুল আলম ত্রাণ নিয়ে গাজায় পৌঁছাননি। এই প্রতিবেদন লেখা অবধি তার জাহাজ যাত্রাপথেই রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি একটি ছবির মাধ্যমে ভুয়া দাবি ছড়ানো হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে ফ্লোটিলা বহরের কোনো জাহাজ গাজায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। শহিদুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে জাহাজে থাকা অবস্থায় নিয়মিত যাত্রাপথের আপডেট শেয়ার করছেন, তবে গাজায় পৌঁছানোর কোনো তথ্য তিনি প্রকাশ করেননি। তিনি যদি গাজায় পৌঁছে ত্রাণ বিতরণ করতেন, তবে এই ঘটনার তথ্য ও ভিজ্যুয়াল মিডিয়া দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হতো কিন্তু এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এদিকে, ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের ইউটিউব চ্যানেলে ‘কনশানস্’ জাহাজের লাইভ স্ট্রিমে এই প্রতিবেদন লেখার সময় (৩ অক্টোবর, বিকেল ৪টা ০১ মিনিট) জাহাজটিকে যাত্রাপথেই দেখা গেছে।

রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণে, প্রচারিত ছবিতে আঙুলের বিকৃতি ও আলো–ছায়ার অসামঞ্জস্যসহ একাধিক এআই-জনিত অসঙ্গতি শনাক্ত হয়েছে।

পরবর্তীতে ছবিটি এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী টুল হাইভ মোডারেশনে পরীক্ষা করে দেখা যায়, ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৯ শতাংশ।

Screenshot: Hive Moderation. 

এই ছবির বিষয়ে আরও অনুসন্ধানে ‘Nacky Official’ নামের একটি ফেসবুক পেজে ২ অক্টোবর ২০২৫ রাত ৯টা ১৪ মিনিটে প্রকাশিত এই ছবি সংবলিত সম্ভাব্য প্রথম পোস্ট পাওয়া যায়। পেজটি পর্যালোচনায় হিজাব পরিহিত এক নারীর বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও দেখা যায়। পেজের ইন্ট্রোতে ওই নারী নিজের নাম ‘নেকি’ বলে দাবি করেছেন এবং ক্যাটাগরিতে ‘রিলস ক্রিয়েটর’ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। শহিদুল আলমের আলোচিত ছবিতেও একজন হিজাব পরিহিত নারীকে পানির বোতল হাতে দেখা গেছে। অর্থাৎ, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই নারী ছবিটি তৈরি করেছেন।

সুতরাং, শহিদুল আলম গাজায় পৌঁছেছেন দাবিতে এআই দিয়ে তৈরি একটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img