গতকাল ১৬ জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দলটির নেতাকর্মীরা গোপালগঞ্জে যান। তারা পৌঁছানোর আগেই সমাবেশস্থলে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এরপরও সমাবেশ করেন দলটির নেতাকর্মীরা। তবে পরবর্তীতে বিকেলেই সেনাবাহিনীর এপিসি (আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) ব্যবহার করে তাদের গোপালগঞ্জ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দিরভর সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৪ জন নিহত হন।
এরই প্রেক্ষাপটে, রাতের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে এটি অবরুদ্ধ এনসিপি নেতাকর্মীদের ওপর দ্বিতীয় দফায় হামলার দৃশ্য।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি গতকাল অর্থাৎ, ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে অবরুদ্ধ এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর স্থানীয় আওয়ামী সমর্থকদের দ্বিতীয় দফায় হামলার কোনো দৃশ্যের নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২১ সালে গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার এতে dhakawave.com লেখা একটি লোগো দেখতে পায়।
পরবর্তীতে প্রাপ্ত লোগোর সূত্র ধরে অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম ঢাকাওয়েভ-এর ফেসবুক পেজ Dhakawave Digital পর্যবেক্ষণ করে পেজটিতে ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর প্রচারিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটির ক্যাপশনের দাবি অনুযায়ী, এটি ২০২১ সালে গোপালগঞ্জে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের হওয়া দফায় দফায় সংঘর্ষ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপের সময় ধারণ করা হয়। ভিডিওতে। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গেটের বাইরে অবস্থানরত পুলিশকে ধাওয়া দিতেও দেখা যায়। আলোচিত ভিডিওতে মূলত সেই অংশটুকুই দেখানো হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০২১ সালের ২২ নভেম্বর মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হামলা, ভাঙচুরের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদ খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেবছর ২১ নভেম্বর রাতে মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের মসজিদের সামনের রাস্তার ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্রিকেট খেলছিলেন। এসময় মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা তাঁদের সেখানে খেলতে নিষেধ করায় উভয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে উভয় প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা সংঘটিত হয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হন। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, ৫ পুলিশ সদস্য, সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হন বলেও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়। মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ জাকির হোসেন মেডিকেল কলেজের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের সূচনা হওয়ার অভিযোগ করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি গতকাল ১৬ জুলাইয়ের নয়।
সুতরাং, ২০২১ সালে গোপালগঞ্জের বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সংঘর্ষের ভিডিওকে গতকাল গোপালগঞ্জে অবরুদ্ধ এনসিপি নেতাকর্মীদের ওপর দ্বিতীয় দফায় হামলার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Dhakawave Digital Facebook Page: গোপালগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ।
- Prothom Alo Website: শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হামলা, ভাঙচুরের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
- Rumor Scanner’s Analysis