গতকাল (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জে এনসিপির জুলাই পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত ৪ জন নিহত হন। উক্ত ঘটনার পর গতকাল রাত ৮ টা থেকে থেকে আজ সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে, “সন্ধ্যার পর থেকে গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর তাণ্ডব শুরু করেছে, রেহাই পায়নি ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা ও মা বোনেরা । শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনী কর্তৃক জনতাকে মারধরের দৃশ্যের নয় বরং, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ এর বনানীর বাড়িতে লুটপাটের চেষ্টাকালে সেনাবাহিনীর প্রতিহত করার ভিডিও দাবিতে ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ইন্টারনেটে বিদ্যমান রয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওর কী-ফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘Injamamul Hoq’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ১০ই আগস্ট প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

উক্ত ভিডিওর ক্যাপশনে দাবি করা হয়, “২০২৪ সালের ৭ আগস্ট রাত ১১টায় বনানীর ৮ নম্বর রোডে আওয়ামী যুবলীগ নেতা শেখ পরশের বাসভবনে বস্তির কিছু লোক ডাকাতি ও লুটতরাজের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করে। ঘটনার সময় তাৎক্ষণিকভাবে খবর পেয়ে বনানী থানা বিএনপির ২ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইমান হোসেন নূর, পাঞ্জাবি পরিহিত অবস্থায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর সহায়তা চান। সেনাবাহিনীর সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ডাকাতদের প্রতিহত করতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে তারা শেখ পরশের বাড়িটি বনানী সোসাইটির নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে বুঝিয়ে দেন।”
সেসময় একই দাবিতে বিভিন্ন ইউটিউব অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি (১, ২, ৩) পোস্ট হতে দেখা যায়।
প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে গুগল ম্যাপের সহায়তায় বনানী ৮ নাম্বার রোডের স্ট্রিটভিউ পর্যালোচনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওর বাড়ির সাথে স্ট্রিটভিউয়ের বাড়ির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। প্রচারিত ভিডিওতে থাকা বাড়ির বিপরীত পাশের বাড়ির দেয়ালে আওয়ামী লীগ ও পরশের ছবি সম্বলিত বিভিন্ন পোস্টার দেখতে পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, ভিডিওতে সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত ব্যক্তির নাম মোঃ ইমান হোসেন নূর, তিনি বনানী থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। আলোচিত ভিডিওতে থাকা ব্যক্তির সাথে উক্ত ব্যক্তি চেহারা ও শারীরিক গঠনের মিল রয়েছে।

অর্থাৎ, এটি নিশ্চিত যে আলোচিত ভিডিওটি গত আগস্ট মাসে রাজধানীর বনানীতে ধারণ করা।
সুতরাং, ২০২৪ সালে আগস্ট মাসে বনানীর একটি বাড়িতে লুটপাটের চেষ্টাকালে সেনাবাহিনীর প্রতিহত করার দৃশ্যকে সাম্প্রতিক সময়ে গোপালগঞ্জে জনতার ওপর সেনাবাহিনীর হামলার ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Injamamul Hoq – Facebook Post
- Eman Hossain Nur – Facebook Post
- Google Maps – Street View