২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে এবছর জুলাই মাস জুড়ে দেশের প্রতিটি জেলায় পদযাত্রা করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। উক্ত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জ যায় দলটির নেতাকর্মীরা। তবে কর্মসূচিটির নাম দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা দেওয়া হলেও গোপালগঞ্জের কর্মসূচিটিকে তারা মার্চ টু গোপালগঞ্জ হিসেবে অভিহিত করেন। এনসিপির এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকাল গোপালগঞ্জের আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। যাতে অন্তত ৪ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি অনেকে আহতও হন। উক্ত সংঘর্ষের সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মাঠে নামেন দাবিতে কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে গণমাধ্যম কর্মীদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

অস্ত্রধারী ব্যক্তিদের একই ছবি ফেসবুকে প্রচার করে ভিন্ন দাবি করতেও দেখা যায়। পোস্টটিতে দাবি করা হয়, অস্ত্রধারী এই ব্যক্তিরা এনসিপির সদস্য। যারা গতকাল পুলিশ ও সেনাবাহিনীদের সাথে একত্র হয়ে গোপালগঞ্জ বাসীদের ওপর হামলা চালায়। এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত ছবিগুলোর পাশাপাশি দেশীয় অস্ত্র হাতে কয়েকজন ব্যক্তির ছবিও ফেসবুকে প্রচার করা হয়। ছবিগুলো প্রচার করে দাবি করা হয়, এই ছবিগুলোও গতকাল গোপালগঞ্জে ধারণ করা। যাতে গতকাল এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণকারী আওয়ামী সমর্থকদের দেখা যাচ্ছে। এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অস্ত্রধারী ব্যক্তিদের ছবিগুলো গতকাল গোপালগঞ্জের সংঘর্ষের সময়ের নয়। প্রকৃতপক্ষে, গতবছর কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন জুলাইয়ের বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা-কর্মীদের হামলার ছবিকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
আগ্নেয়াস্ত্র হাতে তিন ব্যক্তির ছবিগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক যুগান্তর ও খবরের কাগজ-এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের জুলাই ও সেপ্টেমর মাসে চট্টগ্রামে সংঘর্ষে নিহত ৩ এবং অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করা সেই ফিরোজ গ্রেফতার শিরোনামে প্রকাশিত দুটি পৃথক পৃথক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনগুলোতে ব্যবহৃত ছবিগুলোর সাথে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ব্যক্তিদের ছবির হুবহু মিল লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, ছবিগুলো গতবছর অর্থাৎ, ২০২৪ সালে জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সময় ধারণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি করা যুবকরা ছাত্রলীগের কর্মী।

অপরদিকে আরেক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হেলমেট পরিহিত অবস্থায় গুলি করতে দেখা ব্যক্তির নাম মো. ফিরোজ। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর যুবলীগ কর্মী। চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি করে সায়মন ওরফে মাহিন নামের দোকান কর্মচারী হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এছাড়া, মূলধারার গণমাধ্যম ডেইলি স্টার-এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই ডেইলি স্টারের ক্যামেরায় সায়েন্সল্যাবে রামদা-লাঠিসোঁটা হাতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত পোস্টে দেখতে পাওয়া দেশীয় অস্ত্রধারী ব্যক্তিদের ছবির সাথে উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত দুটি ছবির হুবহু মিল রয়েছে। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছবিগুলো গতবছর জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন ঢাকার সায়েন্সল্যাব এলাকায় ১৬ জুলাই ধারণ করা হয়। ছবিগুলোতে দেখতে পাওয়া অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
সুতরাং, গতবছরের জুলাই মাসে আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার পুরোনো ছবিকে গোপালগঞ্জে অস্ত্রধারী আওয়ামী লীগ ও এনসিপি সমর্থকদের ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Khaborer Kagoj Website: চট্টগ্রামে সংঘর্ষে নিহত ৩
- Jugantor Website: অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করা সেই ফিরোজ গ্রেফতার
- Daily Star Website: ডেইলি স্টারের ক্যামেরায় সায়েন্সল্যাবে রামদা-লাঠিসোঁটা হাতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী
- Rumor Scanner’s Analysis