বিএনপিকে চাঁদা না দেয়ার কারণে নয়, ভিডিওর ব্যক্তিকে মারধর করা হয়েছে মোবাইল চুরির দায়ে

সম্প্রতি, “পিরোজপুরে বিএনপিকে চাঁদা না দেয়ায় দোকানদারকে দোকান থেকে বের করে এনে বর্বরোচিত ভাবে নির্যাতন করা হয়। বর্তমানে এটাই বাংলাদেশের বাস্তব চিত্র” শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ অবধি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি প্রায় ৬ লক্ষবার দেখা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপিকে চাঁদা না দেওয়ায় পিরোজপুরে এক ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের এই দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভিডিওতে প্রদর্শিত মারধরের শিকার ব্যক্তি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা পৌরসভার পুরাতন পরিবহন বাস কাউন্টারের পাশে অবস্থিত এক ব্যক্তির দোকানে মোবাইল চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়লে তাকে মারধর করা হয়। আলোচিত ভিডিওটি সেই মুহূর্তেই ধারণ করা। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গার প্রেসক্লাবের সদস্য শেখ রাজুর  ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৩০ এপ্রিল প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Image Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির সাথে উক্ত ভিডিওর শুরুর কিছু অংশের হুবহু মিল রয়েছে। উভয় ভিডিওতেই একই ব্যক্তিকে মারধর করতে দেখা যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা পৌরসভার পুরাতন পরিবহন বাস কাউন্টারের পাশে অবস্থিত আলম নামের এক ব্যক্তির দোকানে চুরি করতে গিয়ে ভিডিওর ব্যক্তি হাতানাতে ধরা পড়েন। 

পরবর্তী অনুসন্ধানে Mehedi Hasan নামের আরেকটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ভিন্ন কোণ থেকে ধারণ করা একই ঘটনার আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটিতেও চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। 

একই ভিডিওটি চলতি বছরের মে মাসে ‘পিরোজপুরের চাঁদা না দেওয়ায় একজন হিন্দু ব্যবসায়ীকে বিএনপির নেতাকর্মীরা মারধর করছে’ দাবিতেও প্রচার করা হয়েছিল। সে সময়ে বিষয়টিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো রিউমর স্ক্যানার। 

বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে সেসময় আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত শামীমের সাথে যোগাযোগ করেছিল রিউমর স্ক্যানার টিম। প্রতিত্তোরে তিনি জানিয়েছিলেন, ভিডিওতে প্রদর্শিত ব্যক্তির নাম মোঃ দ্বীন ইসলাম ঘরামী। চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল দ্বীন ইসলাম ঘরামী ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আলম মিঞার দোকান থেকে মোবাইল চুরি করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন। তখন দোকানের মালিক আলম মিঞা অভিযুক্ত দ্বীন ইসলাম ঘরামীকে মারধর করেন। তবে পরবর্তীতে স্থানীয়দের অনুরোধে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি। 

অর্থাৎ, চাঁদার দাবিতে নয় বরং মোবাইল চুরির দায়ে মোঃ দ্বীন ইসলাম ঘরামী নামক উক্ত ব্যক্তিকে মারধর করা হয়েছে তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে। 

সুতরাং, বিএনপিকে চাঁদা না দেওয়ায় পিরোজপুরে এক ব্যবসায়ীকে নির্যাতন করা হয়েছে দাবিতে চুরির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মারধরের ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

  • SK Raju: Facebook Video 
  • Mehedi Hasan: Facebook Video  
  • Yasin Arafat Shamim: Statement 
  • Rumor Scanner’s Previous Fact-check

আরও পড়ুন

spot_img