হিন্দু নয়, চুরির দায়ে ফরিদপুরে মারধরের শিকার ব্যক্তি মুসলিম

সম্প্রতি, বাংলাদেশের পিরোজপুরের চাঁদা না দেওয়ায় একজন হিন্দু ব্যবসায়ীকে বিএনপির নেতাকর্মীরা মারধর করছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

পিরোজপুরে

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই ভিডিও এক্সে জিহাদীরা হিন্দু দোকানীকে মারধর করছেন দাবিতে প্রচার করা হয়।

এক্সে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন  এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।  

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চাঁদা না দেওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের হিন্দু ব্যবসায়ীকে মারধর করা কিংবা জিহাদীদের হিন্দু দোকানীকে মারধর করার তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভিডিওতে দেখতে পাওয়া মারধরের শিকার ব্যক্তি মুসলিম। মোবাইল চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়লে তাকে মারধর করা হয়। আলোচিত ভিডিওটি সেই মুহূর্তেই ধারণ করা।

দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গার প্রেসক্লাবের সদস্য শেখ রাজু নামক এক ব্যক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ৩০ এপ্রিল প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটির সাথে উক্ত ভিডিওর শুরুর কিছু অংশের মিল রয়েছে। উভয় ভিডিওতেই একই ব্যক্তিকে মারধর করতে দেখা যায়। ভিডিওটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা পৌরসভার পুরাতন পরিবহন বাস কাউন্টারের পাশে অবস্থিত আলমের নামের ব্যক্তির দোকানে চুরি করতে গিয়ে ভিডিওর ব্যক্তি হাতানাতে ধরা পড়েন। 

পরবর্তী অনুসন্ধানে Mehedi Hasan নামের আরেকটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ভিন্ন কোণ থেকে ধারণ করা একই ঘটনার আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot: Facebook 

উক্ত ভিডিওটিতেও চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও ভিডিওটিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আরেকজনের নিকট নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র হস্তান্তর করতে দেখা যায়। 

পরবর্তীতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত শামীমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ভিডিওতে দেখতে পাওয়া মারধরের শিকার ব্যক্তি হিন্দু নয়, তিনি মুসলিম। তার নাম মোঃ দ্বীন ইসলাম ঘরামী। গত ৩০ এপ্রিল তিনি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আলম মিঞার দোকান থেকে মোবাইল চুরি করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন। তখন দোকানের মালিক আলম মিঞা দ্বীন ইসলামকে মারধর করেন। তবে পরবর্তীতে স্থানীয়দের অনুরোধে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি। 

এছাড়াও ইয়াসিন আরাফাত শামীম সেসময় ধারণ করা মোঃ দ্বীন ইসলাম ঘরামীর এবং তার জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবিও রিউমর স্ক্যানারকে সরবরাহ করেন। যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, মারধরের শিকার ব্যক্তি হিন্দু ধর্মাবলম্বী নয়।

Image Collage by Rumor Scanner 

সুতরাং, চাঁদা না দেওয়ায় পিরোজপুরে হিন্দু ব্যবসায়ীকে বিএনপি নেতাকর্মীদের মারধর কিংবা কট্টরপন্থী মুসলিমদের দ্বারা হিন্দু দোকানীকে মারধর করার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Statement of Yasin Arafat Shamim, General Secretary, Alfadanga Press Club 
  • SK Raju Facebook Post
  • Mehedi Hasan Facebook Post

আরও পড়ুন

spot_img