গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তীতে গত ১৩ জুন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা আসে, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে আগামী বছরের রমজান মাসের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে। এর পর গত ১৮ জুন থেকে গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমের সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে প্রচার করা হয়, “এপ্রিলে নির্বাচিত সরকার পাবে দেশ, এরপর চুপচাপ সরে যাব”।
এরূপ শিরোনামে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ: আজকের পত্রিকা (ফেসবুক), বাংলা আউটলুক, পদ্মা টাইমস২৪, সুখবর, দৈনিক সবুজ বাংলা, এইদিন এইসময়, উন্নয়ন সংবাদ।

এরূপ দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এছাড়াও ‘নয়া শতাব্দী’ আলোচিত দাবিতে সংবাদ প্রচার করে পরবর্তীতে তা সরিয়ে নেয়।

উক্ত সংবাদের প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয় যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পর ড. ইউনূস আবার এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলছেন। অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে, ড. ইউনূসের উক্ত বক্তব্যটি গত ১৩ জুনে তারেক রহমানের সাথে হওয়া বৈঠকের পরবর্তী সময়ের।

কোনো তারিখ উল্লেখ ছাড়া ফেসবুকে প্রচারিত এরূপ পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, “এপ্রিলে নির্বাচিত সরকার পাবে দেশ, এরপর চুপচাপ সরে যাব” শীর্ষক মন্তব্যটি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস তারেক রহমানের সাথে হওয়া বৈঠকের পরবর্তী সময়ে করেননি বরং, তারেক রহমানের সাথে হওয়া উক্ত বৈঠকের আগের দিন গত ১২ জুনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে এরূপ মন্তব্য করেছিলেন ড. ইউনূস৷ প্রকৃতপক্ষে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে এরূপ বিবৃতির পর নতুন করে এপ্রিলে নির্বাচনের বিষয়ে কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করেননি ড. ইউনূস।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত গণমাধ্যম ‘বাংলা আউটলুক’ এর ফেসবুক পোস্টটির মন্তব্য বিভাগে দেওয়া প্রতিবেদনে বলতে দেখা যায়, “প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছেন, আগামী এপ্রিলের মধ্যেই দেশ নির্বাচিত সরকার পাবে, এবং এরপর বর্তমান সরকার চুপচাপ সরে যাবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে গত ১২ জুন দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।”
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে পরবর্তী অনুসন্ধানে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ এর ওয়েবসাইটে “‘People see government as the enemy’: Bangladesh’s interim leader on the legacy of a toxic system” শীর্ষক শিরোনামে এ গত ১২ জুনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বা সাক্ষাৎকার পাওয়া যায়। উক্ত সাক্ষাৎকারটিতে ড. ইউনূসকে বাংলাদেশের দুর্নীতি, জুলাই আন্দোলন, নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে কথা বলতে দেখা যায় এবং এক পর্যায়ে ড. ইউনূসকে বলতে দেখা যায়, “এপ্রিলে আমরা নির্বাচিত সরকার পাবো এবং এরপর আমরা চলে যাবো।” (অনূদিত)
এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও গত ১৩ জুন পরবর্তী সময়ে ড. ইউনূসকে এপ্রিলে নির্বাচনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আর বলতে দেখা যায়নি।
উল্লেখ্য যে, উক্ত সাক্ষাৎকারটি ‘দ্য গার্ডিয়ান’ এর ওয়েবসাইটে গত ১২ জুন ব্রিটিশ সামার টাইম ১২ টা ২ মিনিট বা বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫ টা ২ মিনিটে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে সাক্ষাৎকারটি নেওয়ার তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। অপরদিকে গত ১৩ জুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা আসে, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে আগামী বছরের রমজান মাসের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে। অর্থাৎ, তারেক রহমানের সাথে বৈঠকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে জানানোর আগেই দ্য গার্ডিয়ানে ড. ইউনূস এপ্রিলে নির্বাচিত সরকার পাওয়ার বিষয়টি বলেছিলেন।
সুতরাং, লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে বৈঠকের পূর্বে আগামী সংসদ নির্বাচনের তারিখ নিয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্যকে তারেক রহমানের বৈঠকের পর ড. ইউনূসের করা মন্তব্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র