সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘জামায়াতের বিরুদ্ধে মিছিলের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা” শীর্ষক শিরোনামে একজন ব্যক্তিকে মার্কিং করাসমেত মূলধারার গণমাধ্যম ‘ইত্তেফাক’ এ প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, মিছিলের দৃশ্যে লাল বৃত্তে চিহ্নিত ব্যক্তি নিষিদ্ধ ঘোষিত ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত মিছিলের দৃশ্যে লাল বৃত্তে চিহ্নিত ব্যক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা নন বরং, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ) সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ – বিসিএল এর কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ইত্তেফাক এর ইউটিউব চ্যানেলে ‘জামায়াতের বিরুদ্ধে মিছিলের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা“‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত মূল ভিডিও প্রতিবেদনটি গত ৩০ মে তারিখে প্রকাশিত হতে দেখা যায়। উক্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির প্রতিবাদে রাজধানীতে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেছে কয়েকটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠন। গত মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভে জামায়াতের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলা হলেও মিছিলের সম্মুখ সারীতে দেখা গেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের এক নেতাকেও যা রাজনৈতিক অঙ্গন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।” এসময় আলোচিত ব্যক্তিকে ইত্তেফাকের প্রতিবেদনটিতে লাল বৃত্তে চিহ্নিত করে দেখানো হয়।

ইত্তেফাকের প্রতিবেদনটির শেষ অর্ধাংশে বলা হয়, “খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উক্ত ছাত্রলীগ নেতার নাম মাহবুব হাবীব। তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ – বিসিএল এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।”

পরবর্তীতে উক্ত তথ্যর সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে ‘Mahbub Habib’ নামে উক্ত ব্যক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় ইত্তেফাক এর উক্ত প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট নিয়ে গত ৩১ মে তিনি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেন, “…গতকাল দৈনিক ইত্তেফাক একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে—“জামায়াতের বিরুদ্ধে মিছিলের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা!” শিরোনামে থাকা তথ্য দেখে যেকোনো পাঠক-দর্শক ধরে নেবে, জামায়াতবিরোধী মিছিলে আওয়ামী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কোনো নেতা নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

তাদের দেওয়া লাল বৃত্তে চিহ্নিত ব্যক্তিটি আমি—বাংলাদেশ জাসদের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (BCL)- এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক। এই “ছাত্রলীগ” আওয়ামী লীগভুক্ত নয়—এটা ইত্তেফাক জানত না, এমন বিশ্বাস করা নিতান্তই সরলতা।” এছাড়াও উক্ত পোস্টে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে ইত্তেফাকের সমালোচনা করেন তিনি।

এছাড়াও, এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাসদ সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ – বিসিএল এর সভাপতি গৌতম চন্দ্র শীলের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১ জুনে প্রকাশিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায় যেখানে ‘ইত্তেফাক’ এর উক্ত প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় এবং আলোচিত ব্যক্তির পরিচয়ও উল্লেখ করা হয়। বলা হয় যে, লাল বৃত্ত দিয়ে শনাক্ত করা উক্ত ব্যক্তি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল এর কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ জাসদ সমর্থিত সংগঠন এবং তাদের সভাপতি গৌতম চন্দ্র শীল ও কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান৷ অপরদিকে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।

তাছাড়া, এই দুইটি সংগঠনের মধ্যে আরো পার্থক্য রয়েছে। আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইংরেজি সংক্ষিপ্তরূপ বিএসএল যার পূর্ণরূপ Bangladesh Students’ League. অন্যদিকে, বাংলাদেশ জাসদ সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইংরেজি সংক্ষিপ্তরূপ বিসিএল যার পূর্ণরূপ Bangladesh Chatra League. এছাড়াও, সংগঠন দুইটির লোগোর মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের লোগো মূলত কালো রংয়ের ও তিন তারকা সম্বলিত। অপরদিকে বাংলাদেশ জাসদ সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ – বিসিএলের লোগো মূলত লাল রঙের ও এক তারকা সম্বলিত।

সুতরাং, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ) সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ – বিসিএল এর কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমানকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র