সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ‘মৌরিতানিয়ার হজ্ব যাত্রীদের বিমান দুর্ঘটনা। লোহিত সাগরের তীরে, পবিত্র মক্কায় যাওয়ার পথে, বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, ২১০ জনেরও বেশি হজ্বযাত্রী শাহাদাত বরণ করেন।’
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি উক্ত বিমান দুর্ঘটনার।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে।
টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সম্প্রতি মৌরিতানিয়ার হজ্ব যাত্রীদের নিয়ে কোনো বিমান দুর্ঘটনার দৃশ্যের নয় বরং, ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ার নামে একটি এয়ারলাইনের এক যাত্রায় দুর্ঘটনার প্রায় শিকার হতে গিয়েও বেঁচে ফিরার দৃশ্য দাবিতে অন্তত ৬ বছর আগে থেকেই ভিডিওটি অনলাইনে বিদ্যমান।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ফিলিপাইন ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ফিলিপাইন নিউজ’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে একটি ভিডিওর সংযুক্তি পাওয়া যায় যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

ভিডিওটি সম্পর্কে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবরে লায়ন এয়ারের একটি বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়। উক্ত বিমানটির দুর্ঘটনার শিকার হওয়া যাত্রার আগের আরেকটি যাত্রায় দুর্ঘটনার প্রায় শিকার হতে গিয়ে বেঁচে যায় এবং সংযুক্ত ভিডিওটি সে ঘটনার। উক্ত ভিডিওটি ‘Viral wave trending’ নামের একটি ফেসবুক পেজে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয় এবং তার প্রেক্ষিতে উক্ত প্রতিবেদনে আলোচিত দাবিতে ভিডিওটি সংযুক্ত করা হয়।
পরবর্তীতে ‘Viral wave trending’ নামের উক্ত ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করলে আলোচিত দাবিতে উক্ত ভিডিওটি ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবরে প্রচার হতে দেখা যায়।
এছাড়াও, উক্ত ভিডিওটি ইন্দোনেশিয়ায় ২০১৮ সালের উল্লিখিত বিমান দুর্ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত দাবিতেও আরো কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে ২০১৮ সালে প্রচার হতে দেখা যায়। তবে, ভিডিওটি ঠিক কবেকার এবং কোন ঘটনার সে বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে, আলোচিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং, অন্তত ৬ বছর পূর্বের এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়।
পরবর্তী অনুসন্ধানে সম্প্রতি মৌরিতানিয়ার হজ্ব যাত্রীদের নিয়ে কোনো বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে কি না এ বিষয়ে অনুসন্ধান করলে নাইজেরিয়া ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ব্লু প্রিন্ট’ এর ওয়েবসাইটে গত ২৭ মে তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “লোহিত সাগরের উপকূলে মৌরিতানিয়ার হাজিদের একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার যে গুজব ছড়িয়েছে, তা ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে সরকার। মৌরিতানিয়ার ইসলামিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ বিভাগের পরিচালক এল ওয়ালি তাহা এই দাবি অস্বীকার করে নিশ্চিত করেছেন যে, সব মৌরিতানিয়ান হজযাত্রী নিরাপদে পবিত্র ভূমিতে পৌঁছেছেন এবং কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। এছাড়াও, মৌরিতানিয়া এয়ারলাইন্সও জানিয়েছে যে, সব হাজিকে নিরাপদ ও সুরক্ষিতভাবে সৌদি আরবে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এবং নির্ধারিত কোনো ফ্লাইটেই কোনো দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সংস্থাটি জানায়, এবারের হজ মৌসুমে তারা তিনটি বিদেশগামী/যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনা করেছে।” (অনূদিত)
সুতরাং, অন্তত ৬ বছর পুরোনো একটি ভিডিওকে সম্প্রতি মৌরিতানিয়ার হজ্ব যাত্রীদের নিয়ে বিমান দুর্ঘটনার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Philippine News – Lion Air Plane Tragedy: Video Footage Of Previous Near Crash Incident
- Viral wave trending – Facebook Post
- Shafaqna – A video from inside the Indonesian plane during the fall
- Blueprint – Mauritania government speaks on ‘pilgrims’ plane crash off Red sea coast’