সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “পুরো বাংলাদেশ ধর্ষণের কান্নায় পরিপূর্ণ। #বাংলাদেশ_সংকট” (অনূদিত)
এছাড়াও, দেশের নাম সরাসরি উল্লেখ না করেও বাংলাদেশি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে উক্ত ভিডিওটি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “আর কত দেখতে হবে এমন ধ’র্ষ’ণের পর শিশুকে হ’ত্যামায়ের আর্তনাদ”।
উল্লেখ্য যে, প্রচারিত ভিডিওটিতে ভুট্টা ক্ষেত সদৃশ একটি জায়গায় একটি লাশের পাশে কয়েকজনকে ক্রন্দনরত অবস্থায় দেখা যায়।
এরূপ দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় বরং, ভারতের বিহার রাজ্যের কাটিহার জেলার আজমনগর মহকুমার সিসিয়া গ্রামের এক কিশোরীর লাশের দৃশ্যকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে “এমডি রাহাত” নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ০৬ মার্চে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, “Sisya purab tola AZAMANJAR par khand”. উক্ত পোস্টটির মন্তব্য সেকশন পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, ‘শাহবাজ আলম’ নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর প্রশ্নের জবাবে ‘সোবহান আলী সোবহান আলী’ নামের আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী জানান, ঘটনাটি আজমনগরের পাশে সিসিয়া গ্রামের। এছাড়া, উক্ত একই ক্যাপশনে উক্ত ঘটনার আরো একাধিক ভিডিও পোস্ট হতে দেখা যায়।

এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে ভারতীয় ওয়েবসাইট ভিলেজ ইনফো এর একটি নিবন্ধ থেকে জানা যায়, “সিসিয়া গ্রামটি ভারতের বিহার রাজ্যের কাটিহার জেলার আজমনগর মহকুমায় অবস্থিত। এটি মহকুমার সদর আজমনগর (তহসিলদার অফিস) থেকে ৬ কিলোমিটার এবং জেলা সদর কাটিহার থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ২০০৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, নিমাউল গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে সিসিয়া গ্রামটি অন্তর্ভুক্ত।”
উক্ত সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে বিহার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফার্স্ট বিহারের ওয়েবসাইটে গত ০৭ মার্চে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সম্প্রতি বিহারের কাটিহারে এক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড সামনে এসেছে, যেখানে দুর্বৃত্তরা এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ভুক্তভোগী কিশোরী সন্ধ্যাবেলায় গবাদি পশুর খাদ্যের জন্য মাঠে গিয়েছিলেন, কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফিরে না আসার পর পরিবারের সন্দেহ জাগে। অনেক খোঁজের পর কিশোরীর দেহ ভুট্টা ক্ষেতে পাওয়া যায়। (স্বয়ংক্রিয় অনুবাদের সারাংশ)
এছাড়া, এ বিষয়ে ঝাড়খণ্ড, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম প্রভাতখবরের ওয়েবসাইটে গত ০৬ মার্চে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, আজমনগর থানা এলাকার নিমল পঞ্চায়েতের একটি গ্রামে বৃহস্পতিবার (০৬ মার্চ) সকালে একটি ভুট্টা ক্ষেতে ১২ বছর বয়সী এক নাবালিকা মেয়ের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। পরিবারের সদস্যরা জানান, মেয়েটি বুধবার (০৫ মার্চ) বিকাল ৪টায় ঘাস কাটতে মাঠে গিয়েছিল। সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় তারা খোঁজাখুঁজি শুরু করে, কিন্তু তাকে কোথাও পাওয়া যায়নি। পরদিন বৃহস্পতিবার (০৬ মার্চ) সকালে খোঁজার সময় বাড়ির পিছনের ভুট্টা ক্ষেতে তার অর্ধনগ্ন ও ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায়। মেয়েটির মা ও দাদী অভিযোগ করেন যে তাদের মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। মৃতদেহ পাওয়ার সময় মেয়েটির পরা পায়জামা তার গলায় জড়ানো অবস্থায় ছিল এবং গলা ও শরীরের অন্যান্য অংশে আঘাতের চিহ্ন দেখা গিয়েছিল। (অনুবাদের সারাংশ)
অর্থাৎ, এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রচারিত ঘটনাটি বাংলাদেশের নয় বরং ভারতের বিহারের।
সুতরাং, ভারতের বিহারের ভুট্টা ক্ষেতে পাওয়া এক কিশোরীর লাশের দৃশ্যকে বাংলাদেশে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হওয়া মেয়ের লাশ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Md Rahat – Facebook Post
- Arshad Shaikh – Facebook Post
- Village Info – Sisia
- First Bihar – बिहार में किशोरी के साथ हैवानियत, बदमाशों ने रेप के बाद बेरहमी से मौत के घाट उतारा; हत्या की वारदात से सनसनी
- Prabhat Khabar – नाबालिग की गला दबाकर हत्या, दुष्कर्म की आशंका, मकई की खेत में मिला शव