শনিবার, মে 24, 2025

মুসলিম ব্যক্তির মরদেহের ভিডিও বাংলাদেশে হিন্দু হত্যার ঘটনা দাবিতে অপপ্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পানির মধ্যে একটি মরদেহের দৃশ্য প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “বাংলাদেশি হিন্দু ছেলে সুমনকে হত্যা করে তার মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হলো ইসলামী বাংলাদেশে। বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পর হিন্দু নির্যাতনের স্রোত আরও তীব্র হয়েছে।” (অনূদিত)

ভিডিও

উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দৃশ্যটি সুমন নামের কোনো হিন্দু ব্যক্তির মরদেহের নয় বরং নয়ন হোসেন নামের এক মুসলিম অটোচালকের মরদেহের দৃশ্য আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরবর্তী অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ‘জুয়েল রানা’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২৮ জানুয়ারি তারিখে একটি ফেসবুক লাইভ ভিডিও প্রচার হতে দেখা যায়। উক্ত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির দৃশ্যের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটি সম্পর্কে ক্যাপশনে বলা হয়, “নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁও দরিকান্দি ব্রিজের নিচে অজ্ঞাতনামা লাশ পাওয়া গেছে”।

এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে ‘বিজনেস বাংলাদেশ’ নামের একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে “সোনারগাঁওয়ে হাত-পা বাঁধাবস্থায় যুবকের মরদেহ উদ্ধার” শীর্ষক শিরোনামে গত ২৮ জানুয়ারিতে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটিতে সংযুক্ত ছবিটির সাথে প্রচারিত দৃশ্যের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner

উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে নয়ন (৩০) নামে হাত-পা বাঁধাবস্থায় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে বৈদ্যেরবাজার নৌ-পুলিশ। জানা যায়, যুবকের মরদেহটি ব্রহ্মপুত্র নদে দেখতে পেয়ে থানা পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে [২৮ জানুয়ারি] দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে বৈদ্যেরবাজার নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে। উদ্ধারের পর স্থানীয়রা মৃতের কপাল ও গালে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়।

সোনারগাঁও থানার বৈদ্যেরবাজার নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান মুঠোফোনে জানান, নিহত নয়ন রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার টিক্কাপাড়ার ১৫/সি-১৯ নং বাড়ির মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে। সে সোনারগাঁও উপজেলার সাদীপুর ইউনিয়নের বেলপাড়া এলাকার মোক্তার হোসেনের বাড়িতে ভাড়ায় থাকতেন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর বিস্তারিত বিষয়ে জানা যাবে।”

একই বিষয়ে আজকের পত্রিকা’র ওয়েবসাইটেও গত ২৮ জানুয়ারিতে প্রকাশিত আরেকটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে একই তথ্যের পাশাপাশি জানা যায়, নিহত নয়ন হোসেন একজন অটোচালক ছিলেন। নিহতের ভাই জীবন হোসেন জানান, সোমবার সন্ধ্যায় নয়ন এক নারী যাত্রীকে নিয়ে সাদিপুর থেকে লাঙ্গলবন্দ এলাকায় যান। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। গত ২৮ জানুয়ারি তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। বৈদ্যেরবাজার নৌ-পুলিশের ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান জানান, ব্রহ্মপুত্র নদে ভাসমান অবস্থায় লাশটি পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, যাত্রী সেজে অটো ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে নয়নকে হত্যা করা হয়েছে। নয়নের অটোরিকশাটিও পাওয়া যায়নি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়াও কালবেলা, বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ আরো একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রেও একই তথ্য জানা যায়। অর্থাৎ, নিহত নয়নের পুরো নাম নয়ন হোসেন এবং তার পিতার নাম জয়নাল আবেদীন। তার নাম থেকে স্পষ্ট যে, নিহত নয়ন হিন্দু নন বরং ইসলাম ধর্মাবলম্বী।

এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম যোগাযোগ করে সোনারগাঁও থানার বৈদ্যেরবাজার নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহবুবুর রহমানের সাথে৷ তিনি নিশ্চিত করেন নিহত হওয়া ব্যক্তি হিন্দু নন বরং মুসলিম এবং তার পুরো নাম নয়ন হোসেন। তার পিতার নাম জয়নাল আবেদীন।

সুতরাং, নয়ন হোসেন নামের এক মুসলিম অটোচালকের মরদেহের দৃশ্য প্রচার করে তাকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী দাবি করে সাম্প্রদায়িক আঙ্গিকে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img