সম্প্রতি, বাংলাদেশে হিন্দু নারীকে ধর্ষণের দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু কিছু পোস্টে এটিকে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এলাকার ঘটনা বলে দাবি করা হচ্ছে।

এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি হিন্দু নারীকে ধর্ষণের নয় বরং, নারায়ণগঞ্জে ডাকাতের দলে জড়িত থাকার অভিযোগে আটককৃত মুসলিম নারীর মারধরের শিকার হওয়ার ঘটনাকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে ‘আড়াইহাজার টাইমস’ নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত ২৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে।

উক্ত পোস্টে বলা হয়েছে, আড়াইহাজারে ডাকাতি করতে গিয়ে নারী ডাকাত জনগণের হাতে ধরা পড়ে দুইজন। এরমধ্যে জনগণের পিটুনি খেয়ে একজন ঘটনাস্থলে মারা যান এবং এক মহিলাকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যমে সময় টিভির ওয়েবসাইটে গত ২৭ ডিসেম্বর “ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গণপিটুনিতে যুবক নিহত, এক নারী আটক” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৬ ডিসেম্বর রাতে উপজেলার হাইজাদী ইউনিয়নের কাহিন্দি গ্রামে ডাকাতির প্রস্তুতির সময় গণপিটুনিতে বিল্লাল (৪৫) নামে এক ডাকাত নিহত হয়েছে। এ সময় আহত অবস্থায় লাভলী নামে এক নারী ডাকাতকে আটক করা হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, ‘নিহত বিল্লাল হাইজাদী এলাকার বাসিন্দা ও পুলিশের তালিকাভুক্ত চিহ্নিত অপরাধী। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত নয়টি মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় আটক নারী লাভলীকে আসামি করে আড়াইহাজার থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
এ ঘটনায় ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: “গত ২৬ ডিসেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় গ্রামবাসীর হাতে এক কথিত ডাকাতকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মারধরের ঘটনায় আহত এক নারীকে পুলিশ হেফাজতে আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।”
ওই নারী ডেইলি স্টারকে দাবি করেছেন, তিনি একজন যৌনকর্মী। গ্রামবাসীর চিৎকার শুনে ভয়ে তিনিও দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন৷ গ্রামবাসী তখন তাকে ধাওয়া দিলে তিনি একটি একটি পুকুরে ঝাঁপ দেন৷ সেখান থেকে তুলে তাকে মারধর করা হয়।
আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনায়েত এর মতে, এই চক্রটি রাস্তায় গাড়ি ছিনতাই করতে পারদর্শী এবং মহিলা সদস্যরা ডাকাতির সময় যানবাহন থামাতে সহায়তা করে। এই মহিলাও গ্যাংয়ের একজন সদস্য, তিনি বলেছিলেন।
ওসি আরও বলেন, “এই মহিলা বহুরুপী। একবার গ্রামবাসী তাকে মাদক ও অনৈতিক কাজের অভিযোগে গ্রাম থেকে বের করে দিয়েছিল।”
একজন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, মহিলাটি তার জীবন বাঁচাতে একটি পুকুরে ঝাঁপ দিয়েছিল। গ্রামবাসীরা তাকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে মারধর করে।
বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের রিউমর স্ক্যানার টিম আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনায়েত হোসেনের সাথে কথা বলে। তিনি বলেন, মহিলাটি মুসলিম, তার নাম লাভলী আক্তার।
পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জের (সি-সার্কেল) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনিও নিশ্চিত করেছেন যে মহিলাটি মুসলিম। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, “মহিলা হিন্দু নন; সে মুসলিম। ধর্ষণের দাবি অসত্য এবং সম্পূর্ণ অপপ্রচার।”
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওতে থাকা নারী হিন্দু নন এবং তিনি ধর্ষণেরও শিকার হয়নি।
সুতরাং, ডাকাতি করতে গিয়ে জনগণের হাতে এক মুসলিম নারীর আটক হয়ে মারধরের শিকার হওয়ার ঘটনাকে এক হিন্দু নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- আড়াইহাজার টাইমস- Facebook Post
- Somoy Tv- ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গণপিটুনিতে যুবক নিহত, এক নারী আটক
- Daily Star- ‘Robber’ beaten to death in Narayanganj
- Local Thana Officer’s Statement
- Rumor Scanner’s Own Analysis