সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি: রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানের পর গ্রেপ্তার প্রতারক

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে ফেসবুকে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছেড়ে এর মাধ্যমে আর্থিক প্রতারণা করা সংক্রান্ত একটি বিষয় নজরে আসে রিউমর স্ক্যানারের। পরের কয়েক মাসেও একই কায়দায় ভিন্ন ভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম জড়িয়ে এই ভুয়া নিয়োগের ফাঁদ পাতার বিষয়টি রিউমর স্ক্যানারের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ে। এরপরই এ বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান শুরু করে রিউমর স্ক্যানারের বিশেষায়িত বিভাগ ‘রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট’। দীর্ঘ অনুসন্ধানে দেখা যায়, দেশের ০৭টি সিটি কর্পোরেশন, অন্তত ২০টি পৌরসভা, অন্তত ৬০টি হাসপাতালে এবং অন্তত ২০টি পাসপোর্ট অফিসের নাম, লোগো ব্যবহার করে ফেসবুকে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করে মানুষকে জীবনবৃত্তান্ত প্রথমে ইমেইল পাঠানোর অনুরোধ করা হয়। পরবর্তীতে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে বলা হয়। কথিত নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিগুলোকে বিশ্বস্ত করে তুলতে ব্যবহার করা হয় জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকার লোগোও। রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট দেখেছে, অন্তত ২০২২ সাল থেকে প্রতারণার এই কৌশল কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল প্রতারক। একই সাথে ভুক্তভোগীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির শঙ্কাও ছিল।  

গত ২৬ মে এ বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। 

পড়ুন: ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ফাঁদে প্রতারিত বেকাররা: টার্গেট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান 

প্রতিবেদনে বলা হয়, বছর বছর বিকাশ এবং নগদের মাধ্যমে এই চক্র চাকরি দেওয়ার নামে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলছিল। এসব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছিল ভুয়া ইমেইল। একই ইমেইল এবং মোবাইল নাম্বার একাধিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করার প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট। এই বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে থানায় সাধারণ ডায়েরীও করেছিল ভুক্তভোগী একাধিক প্রতিষ্ঠান। তবে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পূর্বে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার তথ্য পায়নি রিউমর স্ক্যানার। 

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর এটি রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট একাধিক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে পাঠানো হয়৷ 

গত ০৮ জুন আলোচিত এই নিয়োগ প্রতারণার সাথে জড়িত তাওহীদ (২২) নামে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলী আশরাফ ভূঞা জানান, ফেসবুকে গত মার্চে একটি জাতীয় দৈনিকের লোগো এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনের লোগো ব্যবহার করে ছয়টি পদের জন্য একটি ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি তৈরি করেন তাওহীদ। এতে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার জাল স্বাক্ষরও ব্যবহার করা হয়।

রিউমর স্ক্যানার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটির বিষয়েও তথ্য উল্লেখ ছিল। 

Screenshot: Rumor Scanner

সংবাদ সম্মেলনে জনাব আলী আশরাফ জানান, নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালের নামেও একই ব্যক্তি ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিলেন। এই হাসপাতালের বিজ্ঞপ্তির বিষয়েও রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে তথ্য উল্লেখ ছিল।

Screenshot collage: Rumor Scanner 

গ্রেপ্তারকৃত আসামী তাওহীদ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নামেও ভুয়া নিয়োগ প্রকাশ করেছিলেন বলে পুলিশের এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন। রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে এই বিষয়েও উল্লেখ ছিল। 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তারের সময় তাওহীদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল সেট ও ছয়টি সিম জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ঘটনার সত্যতাও স্বীকার করেছেন। এখন পর্যন্ত তার ছয়টি সিমের একটিতে লাখ টাকার মতো লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। বাকি সিমসহ অন্য বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 

রিউমর স্ক্যানার এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলী আশরাফ ভূঞার সাথে কথা বলেছে। তিনি রিউমর স্ক্যানারের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের প্রশংসা করেন। বলেন, “আপনারা ভালো একটি নিউজ দিয়েছেন।” জনাব আশরাফ এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানারকে ধন্যবাদ জানিয়ে রিপোর্টটি থেকে বিস্তারিত দেখবেন বলে জানান। 

রিউমর স্ক্যানার এই ধরণের ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে অনুসন্ধান চলমান রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে ‘ভুয়া নিয়োগ’ সেকশনে নিয়মিতই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ সংক্রান্ত ভুয়া বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রকাশিত হচ্ছে। আপনারাও কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে সন্দেহ জাগলে আমাদের জানাতে পারেন। আমাদের সাথে ইমেইল (http://[email protected]), হোয়াটসঅ্যাপ (+8801751589458) কিংবা ফেসবুক পেজের (https://www.facebook.com/RumorScanner) মাধ্যমে সহজেই যোগাযোগ করতে পারবেন। 

আরও পড়ুন

spot_img