উইকিপিডিয়া কি শতভাগ নির্ভরযোগ্য?

বর্তমান সময়ে নানান তথ্য অনুসন্ধানে গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন প্রতিদিন অন্তত একবার হলেও ব্যবহার করে থাকে কমবেশি সকলেই। খেয়াল করলে দেখবেন, আপনি কোনো তথ্যের জন্য সার্চ ইঞ্জিনে খোঁজ করলে সার্চ রেজাল্টের প্রথম পাতাতেই অধিকাংশ সময়েই উইকিপিডিয়ার ফলাফল পাবেন। কিন্তু উইকিপিডিয়ায় থাকা সব তথ্যই কি সঠিক? সাম্প্রতিক বছরগুলোয় উইকিপিডিয়ায় পাওয়া কিছু ভুল নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেশে দেশে।

উইকিপিডিয়া সম্পর্কে প্রাথমিক পাঠ

এনসাইক্লোপিডিয়া বা জ্ঞানের বিশ্বকোষ বলতে আমরা এখন মূলত উইকিপিডিয়াকে বুঝলেও এই ধারণাটির প্রচলন অবশ্য উইকিপিডিয়ার হাত ধরে হয়নি৷ নব্বই দশকের শুরুর দিকে চালু হওয়া ইন্টারপিডিয়াকে (Interpedia) এক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক বলা যায়। বছরখানেক চালু থাকা এই সাইটের পর একই দশকে আরও পাঁচটি এনসাইক্লোপিডিয়ার আর্বিভাব দেখেছে বিশ্ব। কিন্তু এদের কোনোটির পথচলাই ফলপ্রসূ হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে দুই মার্কিন নাগরিক জিমি ওয়েলস এবং ল্যারি সাঙ্গার ২০০১ সালের ১২ ও ১৩ জানুয়ারী উইকিপিডিয়ার দুইটি ডোমেইন (wikipedia.com ও wikipedia.org) রেজিস্ট্রেশন করেন। দিন দুয়েক পর, ১৫ জানুয়ারী আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে সংস্থাটি। এ দিনটি তাই প্রতিবছর উইকিপিডিয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এরপর শুধুই এগিয়ে যাওয়া। শুরুর দিকে ‘Bomis’ নামে ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত হতো উইকিপিডিয়া। বোমিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন উইকিপিডিয়ার সহ-প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস। পরবর্তীতে এককভাবে জিমি ওয়েলস ২০০৩ সালে উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করলে এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া শুরু করে উইকিপিডিয়া।

উইকিপিডিয়া
Image source: Wikimedia commons

বর্তমানে বিশ্বের ৩০০টিরও বেশি ভাষায় চালু আছে জ্ঞানের এই বৃহত্তম বিশ্বকোষ। যেখানে স্থান হয়েছে ভাষা বাংলারও (bn.wikipedia.org)। ২০০৪ সালের ২৭ জানুয়ারি চালু হয় বাংলা উইকিপিডিয়া। ২০২০ সালে ২৫ ডিসেম্বর বাংলা উইকিপিডিয়া পার করে এক লক্ষ নিবন্ধের মাইলফলক।

Image source: Wikimedia commons

কীভাবে কাজ করে উইকিপিডিয়া? 

উইকিপিডিয়ায় যে তথ্য পাওয়া যায়, তা সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের লক্ষ লক্ষ স্বেচ্ছাসেবী অবদানকারীগণ যুক্ত করেন। শুধু কিছু নীতিমালা অনুসরণ করে যে কোনো পেশার ব্যক্তি উইকিপিডিয়ায় অবদান রাখতে পারেন। উইকিপিডিয়ায় কোনো একটি বিষয় নিয়ে প্রথমে একজন লেখা শুরু করেন। এরপর অন্য অবদানকারীরা সেখানে আরো তথ্য যুক্ত করেন। লেখা সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশিত হয়; তবে অভিজ্ঞ অবদানকারীরা পরবর্তীতে সেই লেখা নীতিমালার আলোকে পর্যালোচনা করেন। যদি লেখাটি নীতিমালা অনুযায়ী না হয়, সেক্ষেত্রে যিনি লেখা শুরু করেছেন তাকে কারণ দর্শিয়ে পাতাটি প্রশাসকগণ অপসারণ করে দেন। প্রশাসকগণও অন্য অবদানকারীর মতো স্বেচ্ছাসেবী। তবে তারা শুধু অ্যাকাউন্টে কিছু বিশেষ কারিগরি সুবিধা পান যার মাধ্যমে একজন প্রশাসক উইকিপিডিয়া রক্ষণাবেক্ষণে ভূমিকা রাখেন। নিয়মিত ও অভিজ্ঞ ব্যবহারকারীদের থেকে সম্প্রদায়ের ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রশাসক নির্বাচিত হন। কোনো প্রশাসক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় থাকলে বা নীতিমালার বাইরে কাজ করলে তাঁর এই বিশেষ টুল বা সরঞ্জামটি বাতিল করা হয়।

উইকিপিডিয়ায় যে কেউ নিবন্ধ প্রকাশ করতে পারলেও নিজের নামে বা নিজের বন্ধু, বড় ভাই, নিজের তৈরি বা নিজে যুক্ত এমন ক্লাব, নিজের পরিচিত কোম্পানি, নিউজপোর্টাল প্রভৃতি সম্পর্কে নিবন্ধ তৈরি করা যায় না। নিবন্ধ প্রকাশ করতে হলে তার বিশ্বকোষীয় উল্লেখযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে। কোনো বিষয় সম্পর্কে তথ্য যুক্ত করা যাবে এবং কোন বিষয় সম্পর্কে যুক্ত করা যাবে না, সেটি নির্ণয়ের জন্য উইকিপিডিয়ায় কিছু মানদণ্ড রয়েছে। একে উইকিপিডিয়াতে ‘উল্লেখযোগ্যতা নীতিমালা’ বলা হয়। যেকোনো বিষয় অবশ্যই এই মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে হয়।

উইকিপিডিয়ায় ভুল বা অনির্ভরযোগ্য তথ্য ছড়ানো এড়ানোসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্লক এবং ব্যান করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। এছাড়া, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনো একটি নির্দিষ্ট আর্টিকেল বা পাতা লক করা বা প্রটেক্টের মাধ্যমে সাধারণ ব্যবহারকারীদের সম্পাদনার সুযোগ বন্ধ রাখে উইকিপিডিয়া। ঐ সময়ে নির্দিষ্ট কিছু সম্পাদনাকারীই উক্ত পাতা সম্পাদনা করতে পারেন।

উইকিপিডিয়া সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রকল্প। এতে লেখার জন্য অবদানকারীরা যেমন পারিশ্রমিক পান না, তেমনি নিবন্ধ প্রকাশ করতেও অর্থ দিতে হয় না। পড়াও যায় বিনামূল্যে। উইকিপিডিয়ার ওয়েবসাইট পরিচালনা করতে যে অর্থের প্রয়োজন হয়, তার পুরোটাই আসে ব্যবহারকারীদের ডোনেশন থেকে। আর এজন্য উইকিপিডিয়ায় কখনোই বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয় না।

এক্সপেরিমেন্টে যা মিললো

উইকিপিডিয়ায় যে কেউ যে কোনো তথ্য প্রকাশ করতে পারে না এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিতে একটি এক্সপেরিমেন্ট করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। টিমের পক্ষ থেকে রিউমর স্ক্যানারের একটি উইকিপিডিয়া পাতা খোলা হয়৷ দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

পরবর্তীতে নিবন্ধটি প্রকাশের ঘন্টাখানেকের মধ্যে মুছে ফেলা হয় প্রশাসকদের পক্ষ থেকে। নিবন্ধটি এখনো উইকিপিডিয়ায় থাকার জন্য উল্লেখযোগ্যতা অর্জন করেনি বলে তা রাখা যাচ্ছে না জানিয়ে বার্তাও দেওয়া হয়।

তবে গুগলে ‘উইকিপিডিয়া রিউমর স্ক্যানার‘ লিখে সার্চ দিলে মুছে ফেলা পাতাটি দেখাচ্ছে এখনও। উক্ত পাতায় প্রবেশ করলে অবশ্য কোনো লেখা দেখা যাচ্ছে না।

অর্থাৎ, উইকিপিডিয়ায় যে কেউই নতুন পাতা খুলতে পারে। পরবর্তীতে সেটি মুছে ফেলা হলেও গুগল সার্চে পেজটি দেখতে পারে যে কেউ এবং কিছু তথ্য সার্চ রেজাল্টেই দেখা যায়। যেমন, রিউমর স্ক্যানারের পাতা এবং তথ্যগুলো মুছে ফেলা হলেও সার্চ রেজাল্টে “রিউমর স্ক্যানার (Rumor Scanner) বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ গুজব শনাক্তকারী প্রতিষ্ঠান।” – এই লাইনটি দেখাচ্ছে (এই লাইনটিও অন্তর্ভুক্ত ছিল রিউমর স্ক্যানার বিষয়ক পাতাটিতে)। যদিও উক্ত পাতায় প্রবেশ করলে কোনো তথ্য দেখা যায় না এখন।

উইকিপিডিয়ার তথ্যেও ভুল?

চলতি বছরের (২০২২) সেপ্টেম্বরের ঘটনা৷ এশিয়া কাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে পাকিস্তানের আসিফ আলীর ক্যাচ ফেলে দেয়ায় তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন ভারতীয় ক্রিকেটার আর্শদ্বীপ সিং। সে সময় আর্শদ্বীপের উইকিপিডিয়া পাতায় সম্পাদনা করে ‘ভারত’ শব্দের পরিবর্তে ‘খালিস্তান’ শব্দ বসিয়ে দেন কেউ একজন। এই ঘটনার পর সংশোধিত অংশগুলো সরিয়ে ফেলে উইকিপিডিয়া। সে সময় ভারতের কনিষ্ঠ তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রাজিভ চন্দ্রশেখর টুইট করে বলেন, “কোনো স্থানীয় দায়িত্বশীল ব্যক্তি ছাড়া, ৫০ লাখেরও বেশি ব্যবহারকারীর দেশে সেবাটি কীভাবে এই ধরনের ইচ্ছাকৃতভাবে দেওয়া ভুল তথ্যের প্রচারণা চালাতে পারে?”

উইকিপিডিয়ায় এমন ভুল তথ্য উপস্থাপন নতুন কোনো উদাহরণ নয়। চলতি বছর ভারতীয় গায়িক জোজো মুখার্জি, ২০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ক্রিকেটার ডেল স্টেইন, ২০১৮ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বিষয়ক ভুল তথ্য ছিল উইকিপিডিয়ায়। উইকিপিডিয়ায় একাধিক ভুল তথ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন। 

উইকিপিডিয়ার তথ্য গুগলে সবার প্রথমে আসে কীভাবে?

খেয়াল করলে দেখবেন, আপনি যখনই কোনো তথ্য পেতে গুগলে কিওয়ার্ড সার্চ করেন তখনই গুগলের সার্চ রেজাল্টের প্রথম পাতায় উইকিপিডিয়ার তথ্য দেখানো হয়। সবসময়ই যে এমন ঘটে তা অবশ্য বলা যাবে না। তবে প্রথম পাতায় না এলেও একটু পেছনের পাতাগুলোয় ঠিকই পাবেন উইকিপিডিয়ার কোনো না কোনো পাতা। এর কারণ যে শুধু সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এসইও, তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারকে আইটি সুবিধা দিয়ে আসা মার্কিন প্রতিষ্ঠান TCG এ বিষয়ে বেশ কিছু পয়েন্ট তুলে এনেছে তাদের এক প্রতিবেদনে

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক ওয়েবসাইটই উইকিপিডিয়ার বিভিন্ন পেজের লিঙ্ক তাদের তথ্যের ভেতর হাইপারলিন্ক বা তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করে। সার্চ ইঞ্জিনগুলো অনুমান করে, যে কোনও পাতা যা অনেকগুলো অন্যান্য সাইটের সাথে লিঙ্ক করা হচ্ছে তা হাই র‌্যাঙ্কিংয়ে থাকা উচিত।

Images source: Stuff.co.nz

উইকিপিডিয়া কোনো বিজ্ঞাপন দেখায় না। উইকি’র একেকটি পাতার লেখা দীর্ঘ হয়। সে তুলনায় একেকটি লেখায় সংযুক্ত ছবির সংখ্যা অনেক কম৷ এক্ষেত্রে হাই কোয়ালিটি কন্টেন্ট হিসেবে সুবিধা পায় উইকির পাতাগুলো। 

লক্ষ্য করলে দেখবেন, উইকিপিডিয়ার পাতাগুলো নিয়মিত আপডেট হয়। এমনকি বহু বছরের পুরানো পাতাগুলোতেও নতুন আপডেট আসে প্রায়ই। ক্রাউড সোর্সিংয়ের সুবিধা নিয়ে করা এই আপডেট সার্চ ইঞ্জিনে হাই র‌্যাঙ্কিং পেতে সুবিধা দেয় উইকিপিডিয়াকে। 

উইকিপিডিয়ার হাই র‌্যাঙ্কিং পাওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ হতে পারে, প্রাসঙ্গিক শব্দের সর্বোচ্চ ব্যবহার। উদাহরণ হিসেবে ভেড়া‘র পাতাকে ধরলে দেখা যায়, ভেড়া শব্দটি H1 Heading Tag এ রয়েছে। এরপর একই পাতায় একাধিক অংশে ভেড়া এবং প্রাসঙ্গিক শব্দকে রাখা হয়েছে। যদি একটি পাতায় একটি অনুসন্ধান শব্দের সাথে সম্পর্কিত অনেক শব্দ থাকে, তবে সার্চ ইঞ্জিন ধরে নেবে যে শব্দটি পাতার মূল বিষয়। অতএব, পাতাটি অনুসন্ধান ফলাফলে উচ্চতর স্থান বা হাই র‌্যাঙ্ক পাবে। একটি পাতা বা URL-এর HTML কোডিং-এ যদি সংশ্লিষ্ট আর্টিকেল সম্পর্কিত শব্দগুলোকেও রাখা হয়, সেটিও সুবিধা দেয় হাই র‍্যাঙ্ক পেতে।

সাধারণত ধীরে লোড হওয়া একটি ওয়েবসাইট থেকে মানুষ সাধারণত দ্রুত লোড হওয়া ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সার্চ ইঞ্জিনও তাই উপরের দিকে রাখে দ্রুত লোড হওয়া ওয়েবসাইটগুলোকে। এক্ষেত্রেও সুবিধা পাচ্ছে উইকিপিডিয়া। ওয়েবসাইট লোড হওয়ার সময় বিবেচনায় এগিয়ে আছে উইকিপিডিয়ার পাতাগুলো।

উইকিপিডিয়া কি নির্ভরযোগ্য নয়?

জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ডয়চে ভেলে’ (DW) ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারী প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, উইকিপিডিয়া শতভাগ বিশ্বস্ত কোনো সূত্র নয়। এটা ঠিক যে, অনেক তথ্যই এখানে ভালোভাবে নথিভুক্ত, গুণগত মানও পরীক্ষিত এবং সম্পূর্ণ আপ-টু-ডেট। কিন্তু চালু হওয়ার ২০ বছর পর এসেও অনলাইন এই বিশ্বকোষ শতভাগ নির্ভরযোগ্য নয়, কারণ এতে তথ্য হেরফের (manipulation) করা হতে পারে এবং কখনও কখনও প্রায় শনাক্ত করা যায় না এমন সূত্র এবং তথ্যও ব্যবহার হয় এখানে।
ডয়চে ভেলে’র প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, Mustelodon নামক একটি কাল্পনিক বিলুপ্ত মাংসাশী প্রাণী সম্পর্কে একটি ধাপ্পাবাজি (hoax) আর্টিকেল উইকিপিডিয়ায় ১৪ বছর ৯ মাস ধরে ছিল। ২০২০ সালে উক্ত পাতাটি অপসারণ করে উইকিপিডিয়া। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে পরবর্তীতে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে উইকিপিডিয়া।

উইকিপিডিয়ার এমন হোক্স অবশ্য এটাই প্রথম নয়। উইকিপিডিয়ায় বেশকিছু হোক্স নিয়ে একটি তালিকা পাওয়া যাবে এখানে।

উইকিপিডিয় নীতিমালা অনুযায়ী, “বেশিরভাগ হোক্স তৈরি হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে মুছে ফেলার জন্য চিহ্নিত করা হয়। কিছু অত্যন্ত পরিশীলিত হোক্স, যেমন বিশদ জীবনী সংক্রান্ত তথ্য এবং জাল রেফারেন্স সহ তৈরি করা ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের সম্পর্কে নিবন্ধ, শনাক্ত হওয়ার আগে বেশ কয়েক বছর ধরে থেকে যায়। এই প্রতারণামূলক নিবন্ধগুলো বিশ্বকোষ হিসাবে উইকিপিডিয়ার সুনামকে আঘাত করে।”

উইকিপিডিয়া নিজেও স্বীকার করে যে তারা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র নয়। উইকিপিডিয়ায় “Wikipedia:Wikipedia is not a reliable source” শিরোনামে একটি পাতা রয়েছে। 

উক্ত পাতায় বলা হয়েছে, “উইকিপিডিয়ার তথ্য অন্য কোথাও সাইটেশনের জন্য উইকিপিডিয়া নির্ভরযোগ্য উৎস নয়। একটি ব্যবহারকারী-উৎপাদিত উৎস (User generated source) হিসেবে, এটি যে কোনও সময় যে কেউ সম্পাদনা করতে পারে এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এতে থাকা যে কোনও তথ্য ধ্বংসাত্মক, কাজ চলছে বা কেবল ভুল বলে প্রতীয়মান হতে পারে।”

উইকিপিডিয়া থেকে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করার উপায় কী?

কানাডিয়ান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘make use of (MUO)’ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উইকিপিডিয়ার তথ্যের স্বচ্ছতা যাচাইয়ের উপায় সম্পর্কে বলা হয়েছে। 

MOU বলছে, প্রথমত একটি পাতার বা আর্টিকেলের সাইটেশন (citation) যাচাই করা যেতে পারে। উইকিপিডিয়ার আর্টিকেলের কোনো একটি লাইনের শেষে সুপারস্ক্রিপ্ট ফরমেটে কিছু নাম্বার দেওয়া থাকে। নাম্বারে ক্লিক করলে উক্ত লাইনটির উৎস দেখা যায়। এটিই সাইটেশন।

Image source: MOU

কিন্তু এই সাইটেশনে যে সবসময় নির্ভরযোগ্য সূত্রই থাকে এমন নয়। একটি সাইটেশন নির্ভরযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা তখনই বেশি থাকে যখন দেখবেন এটি একটি একাডেমিক উৎস থেকে আসে, অথবা সরাসরি মূল উৎস থেকে সাইটেশন হয়। অনেক সময় দেখা যায়, আপনি সাইটেশন করা সোর্সে প্রবেশ করতে পারছেন না। কারণ এটি হয়ত অনলাইনে নেই (যেমন অনেক একাডেমিক জার্নালের ক্ষেত্রেই এমন হয়) বা এটি একটি বই থেকে। এই ক্ষেত্রে, আপনি উক্ত সোর্সকে কিওয়ার্ড হিসেবে অনলাইনে অনুসন্ধান করতে পারেন।

এছাড়া, উইকিপিডিয়ার কোনো পাতার Edit History দেখেও পাতাটির নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে সিদ্ধান্তে আসা যায়। একটি পাতায় কখন কীভাবে কারা পরিবর্তনগুলো করছে তা সংশ্লিষ্ট পাতার View History অপশনে ক্লিক করে জানা যায় সহজেই। যদি দেখে মনে হয় যে উক্ত পাতাটি অনেক লোক সম্পাদনা করছে এবং সম্পাদনার মাধ্যমে পূর্বে উল্লেখ করা তথ্যই আবার ফিরিয়ে আনা হচ্ছে তাহলে সম্ভবত পাতাটিতে ভুল উপস্থাপনা করা হয়েছিল বলে ভেবে নিতে পারেন। এটি রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় পাতাগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণ একটি ঘটনা।

যে কোনো পাতার View History অপশনে ক্লিক করে এডিট বিষয়ক বিস্তারিত জানা যায়। Screenshot source: Wikipedia

একটি পাতায় কে কী সম্পাদনা করেছে সেটি পূর্বের সম্পাদনার সাথেও মিলিয়ে দেখার সুযোগ আছে উইকিপিডিয়ায়। এভাবেও আপনি কোনো তথ্যের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসতে পারেন।

বর্তমান সম্পাদনা (বামে) এবং পূর্বের সম্পাদনার (ডানে) সাথে তুলনা করা যায় উইকিতে। Screenshot source: Wikipedia

তবে নির্ভরযোগ্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে উইকিপিডিয়ার তথ্যসূত্র অন্য তথ্যসূত্রের সাথে তুলনা করে দেখা। গুগল স্কলার, মাইক্রোসফট একাডেমিক সার্চ এবং গুগলের এডভান্স সার্চ পদ্ধতির সাহায্যে তথ্য অনুসন্ধান করে দেখাটা আজকাল আর কঠিন কিছু নয়। 

অর্থাৎ, উইকিপিডিয়ায় নির্দিষ্ট বিষয়ে কোনো তথ্য যদি থাকে তাহলে তা সত্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও মিথ্যা যে হবে না তা নয়। এক্ষেত্রে অনুসন্ধান ও নিজস্ব বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্যটির নির্ভরযোগ্যতার ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব। 

আরো পড়ুনঃ গাছ থেকেই কী পৃথিবীর বেশিরভাগ অক্সিজেন উৎপন্ন হয়?

মূলত, ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করে জ্ঞানের মুক্ত বিশ্বকোষ ‘উইকিপিডিয়া’। যাত্রা শুরুর পর থেকে লক্ষ লক্ষ স্বেচ্ছাসেবী বিনা পারিশ্রমিকে উইকিপিডিয়ায় বিভিন্ন বিষয়ে নিবন্ধ তৈরি ও সম্পাদনা করে চলেছেন। নিবন্ধ তৈরিতে অবশ্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশ্বকোষীয় উল্লেখযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হয়। সার্চ ইঞ্জিনের হাই র‌্যাঙ্কিংয়ের সুযোগে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে তথ্য অনুসন্ধানে জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত এক নাম হয়ে উঠেছে উইকিপিডিয়া। তবে উইকিপিডিয়ার সকল তথ্যই যে শতভাগ নির্ভরযোগ্য এমন দাবি উইকিপিডিয়া নিজেও করে না। যাত্রা শুরুর পর থেকে নানান সময়ে এর প্রমাণও মিলেছে, দেখা গেছে ভুল তথ্যের ছড়াছড়িও। এক্ষেত্রে তাই অনুসন্ধান ও নিজস্ব বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্যটির নির্ভরযোগ্যতার ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব। 

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img