ভোজনরসিক বাঙালির খাদ্যতালিকায় স্থান পেয়েছে রকমারি খাবার। রান্না করা মুখরোচক খাবার তো বটেই বাঙালির ভোজনপ্রিয়তার অংশ হয়েছে বিভিন্ন প্যাকেটজাত খাবারও। বিকেলের নাস্তা কিংবা মুড়ির সাথে চানাচুর-বিস্কুটের মত প্যাকেটজাত খাবারগুলো তো রীতিমত অবিচ্ছেদ্য। কিন্তু, কখনো কি এসব প্যাকেটজাত খাবারের গায়ে সাদা বর্গের ভেতর সবুজ বা বাদামি বৃত্তের চিহ্ন খেয়াল করেছেন? যদি করে থাকেন, তবে মনে কি কখনো প্রশ্ন জেগেছে কেন এই বিশেষ চিহ্ন ব্যবহার করা হয় আমাদের নিত্যদিনের প্যাকেটজাত খাবারে?
কেন ব্যবহার করা হয় এই বিশেষ চিহ্ন
মূলত, প্যাকেটজাত খাদ্যের গায়ে বাদামি বা সবুজ বৃত্তের চিহ্ন ব্যবহার করা হয় খাদ্যটি প্রাণিজ(নন-ভেজ) নাকি উদ্ভিজ্জ (ভেজ) তা বুঝানোর জন্য।
সবুজ বৃত্ত দ্বারা কী বোঝায়?
যদি কোনো খাদ্যের গায়ে সাদা বর্গের ভেতর সবুজ বৃত্তের চিহ্ন থাকে তবে বুঝতে হবে সেই খাবারটি প্রস্তুত করার সময় সেখানে কোনও ধরনের প্রাণিজ উপকরণ ব্যবহার করা হয় নি। এটি সম্পূর্ন উদ্ভিজ্জ উপাদান থেকে প্রস্তুতকৃত খাবার। নিরামিষভোজী ব্যক্তি সেটি খেতে পারবেন।
বাদামি বৃত্ত দ্বারা কী বোঝায়?
প্যাকেটের গায়ে সবুজের পরিবর্তে বাদামি বৃত্ত থাকলে তা নির্দেশ করে এই খাবারে প্রাণিজ উপকরণের অস্তিত্ব আছে। অর্থাৎ, নিরামিষভোজী ব্যক্তি সেটি খেতে পারবেন না।
বিশেষ এই চিহ্নের উৎপত্তি
বিশ্বব্যাপী বহু মানুষ নিরামিষশাশী (ভেজ)। অর্থাৎ, তারা প্রাণিজ কোনো খাদ্য(যেমন: মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি) খান না। মূলত, ভারতে ভেজ ও নন-ভেজ দুই ধরনের খাদ্য উপকরণ বহুল প্রচলিত। সনাতন ধর্মাবলম্বী অনেক মানুষ তাদের খাদ্য তালিকায় প্রাণিজ উপাদান পরিহার করে চলেন। ফলে, প্যাকেটজাত খাবার নিয়ে যাতে তাদের দ্বিধায় না পড়তে হয় সেজন্যই এই বিশেষ চিহ্নের ব্যবহার শুরু করে ভারত।
ভারতের নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের অনুমোদিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান Auriga Research এর একটি নিবন্ধে দেখা যায়, ভারতে বাদামি/লাল বৃত্তের এই লেবেলিং বাধ্যতামুলক। ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা আইন ২০০৬ এর বিধি ২৩(২) অনুসারে প্রস্তুতকৃত খাদ্যের উপকরণ সম্পর্কে খাদ্যের মোড়কে লেভেলিং এর কথা উল্লেখ করা হয়। পরবর্তী সময়ে খাদ্যে ভেজ/ নন-ভেজ চিহ্ন বাধ্যতামূলক করা হয়। ২০১১ সালে ভারতে এই চিহ্নের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। এরফলে, ভারতের বাজারে বিক্রি হওয়া যেকোনো প্যাকেটজাত পণ্যের গায়ে এই চিহ্ন ব্যবহারের আইনি বাধ্যবাধকতা আসে।
খাদ্য উপকরণ ছাড়াও কি ব্যবহৃত হয়?
প্যাকেটজাত খাবারের গায়ে এই চিহ্ন প্রাথমিকভাবে ব্যবহৃত হলেও খাদ্য উপকরণ ছাড়াও অন্য উপকরণেও ব্যবহৃত হয় এই বিশেষ চিহ্ন। টুথপেস্ট যার বড় উদাহরণ। মূলত, টুথপেস্ট দাতে ব্যবহার করা হলেও ভুলবশত পেটে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলেই টুথপেস্ট-এও ব্যবহৃত হয় বাদামী/সবুজ বর্ণের বৃত্তের এই বিশেষ চিহ্নটি। এছাড়াও, সাবান, শ্যাম্পু, টয়লেট্রিজ, কসমেটিক্সসহ বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহৃত হয় এই চিহ্ন।
ভারতে পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই পরবর্তীতে এই চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও প্যাকেটজাত অনেক খাদ্যে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই চিহ্নটি।
মূলত, একটি প্যাকেটজাত খাবার শুধুমাত্র উদ্ভিজ্জ উপাদান থেকে তৈরি হলে সেই খাবারের প্যাকেটে সবুজ বৃত্তের চিহ্ন এবং কোনো খাবার প্রাণিজ উপাদান থেকে তৈরি হলে তার গায়ে বাদামি বৃত্তের চিহ্ন থাকে। যাতে নিরামিষভোজি মানুষ কোনো বিপত্তি ছাড়াই নিজের খাবার নির্বাচন করতে পারে।
তথ্যসূত্র
- Auriga Research: Food labelling requirements for declaration of Veg & Non-Veg : Module 5 Food Safety Act 2006 (India)
- Field Report- Johan Fischer, Associate Professor, Department of Social Sciences and Business, Roskilde University in Denmark
- Science Direct: Green and/or brown: Governing food production in India
- Jaagruti: Compuslory Brown and Green Dots on Packaging of all Food, Cosmetic, Household Consumable Products in India